উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকে কিছু না বলে ক্লাস রুম ও শিক্ষক রুমের ১২টি চলমান ফ্যান খুলে নিয়ে গেছেন ঠিকাদার আব্দুল কাদের। ফ্যানগুলো ফেরত দেবার কথা বলার পরেও ঠিকাদার গত প্রায় দেড় মাসে ফ্যান ফেরত দেননি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম। আর আসছে মিটিংয়ে এজেন্ডা এনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয়ের অফিস সূত্র জানায়, উক্ত বিদ্যালয়ের দেড় তলা ভবন করা হয়েছে আরো আগে। দেড় তলার নিচ তলা পুরোটা শ্রেণি কক্ষ আর দোতলায় শিক্ষক মিলনায়তন ও প্রধান শিক্ষকের রুম রয়েছে। ভবনটি ঊর্ধ্বমুখী ও সংস্কারসহ সম্প্রসারণ করতে গিয়ে ওয়াশরুমসহ তিনতলা ভবন করার জন্যে সরকারিভাবে টেন্ডার দেয়া হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের আওতায় বিদ্যালয়টি সম্প্রসারণের কাজ পায় মতলব উপজেলার কলাদি এলাকার ফরিদা এন্টারপ্রাইজ। অথচ পুরো ভবনের কাজ করেছে হাজীগঞ্জের ঠিকাদার আব্দুল কাদের। তবে মাঝে মধ্যে কাজ দেখতে আসতেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন। ফরিদা এন্টারপ্রাইজের কেউ কাজ দেখতে আসেননি বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা।

বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ে নতুন করে কাজ করার সাথে ফ্যান অনুমোদন রয়েছে। তবে পূর্বে যে সকল বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যান ছিলো তার পরিমাণ ১২টি। এই ফ্যানের মধ্যে সব ফ্যান সচল ছিলো। ভবনের কাজ করতে গিয়ে সকল রুমে নতুন সিলিং ফ্যানের বরাদ্দ রাখার কারণে সকল রুমে নতুন ফ্যান লাগানো হয়। ফলে পুরাতন ফ্যানগুলো খুলে নিয়ে যায় ভবনের ঠিকাদার আব্দুল কাদের।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অমর কৃষ্ণ শীল জানান, ভবনের কাজ শেষে নতুন সিলিং ফ্যান লাগানো হয়। এ সময় আমরা পুরাতন ফ্যানগুলো খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি ঠিকাদার কাদের ১২টি সিলিং ফ্যান নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ঠিকাদারকে ফোনে বিষয়টি জানালে ফ্যান নেয়ার কথা স্বীকার করেন আর ফ্যানগুলো ফেরত দেবার আশ্বাস দেন।

এই শিক্ষক আরো জানান, নতুন কাজের ত্রুটি অনেক রয়ে গেছে। ছাদের রুমের দরজা না লাগানোর কারণে একটু বৃষ্টিতে তিন তলার ফ্লোরে পানি জমে যায়। প্রতি তলার ওয়াশব্লকের দরজার সিটকিনি সেটিং হয় না। এছাড়া নিচতলার মূল কলাপসিকল পুরাতন গেইটটিকে রং করে দেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, কাজের অনেক গ্যাপ আছে। ঠিকাদার না বলে আমাদের চলমান ১২টি সিলিংফ্যান নিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন ফ্যানগুলো বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিবেন, কিন্তু এখনো দেননি। তিনি ফ্যানগুলো ফেরৎ না দিলে আসছে মিটিংয়ে এজেন্ডা এনে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঠিকাদার আব্দুল কাদের জানান, বিদ্যালয়ে আমার কিছু মালামাল রয়ে গেছে। সেগুলো আনতে গেলে ফ্যানগুলো পাঠিয়ে দেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নে আব্দুল কাদের বলেন, কলাপসিকল গেট আমার কাজে ধরা নেই।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজ হোসেন জানান, বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজ বুঝে পেয়েছেন লিখিত দেবার পরেই আমরা ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছি। তিনি কাজ বুঝে পাননি বা ফ্যানগুলো ঠিকাদার নিয়ে গেছে আমাদেরেকে আগে জানাননি, এখন কেন এসব বলছেন প্রধান শিক্ষক ? আমি গিয়ে দেখে আপনাকে (সাংবাদিক) জানাবো। তবে সমস্যা নেই, ঠিকাদারের সিকিউরিটি বাবদ টাকা আমাদের কাছে জমা আছে, কাজে ত্রুটি দেখলে সিকিউরিটির অর্থ থেকে কাজ করানো যাবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নব-নির্বাচিত সভাপতি ড. অসীম কুমার দাস জানান, আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে পাইনি। তারপরেও আমি বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ইউ/এসপি/জুন ৩০, ২০২২)