অমল তালুকদার, পাথরঘাটা : রাত নামলেই হানা দেয় মশক বাহিনীর সদস্যরা! এ যে সেই "রাতে মশা দিনে মাছি,এই নিয়ে বেঁচে আছি" দশা!

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভায় মশার উপদ্রবে এখন টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। দিনের আলোয় মশার দাপাদাপি কিছুটা কম থাকলেও বেলা ডুবির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় পৌরবাসীর রক্ত চুষে খাওয়ার মহোৎসব।

ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে মশার কয়েল জালিয়েও রেহাই মিলছে না। মশার উপদ্রবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষই এখন অতিষ্ঠ। পাশাপাশি বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাতেও।

পৌর এলাকা ঘুড়ে দেখা গেছে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। প্রতিনিয়ত ড্রেন, ডোবায় ময়লার স্তুপে ভরে রাখার ফলে বেড়েই চলেছে মশা আর পোকামাকড়। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শব্দটি যেনো এখানে অভিধানে বন্দী। শহরে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঢালু স্থানগুলোতে জমছে পানি। ফলে যেখানে সেখানে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে পৌরসভার মশক নিধন অভিযান। পৌরবাসীর অভিযোগ,মশার বংশবিস্তার রোধে বার বার বলার পরেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ।

১৯৯১ সালে পাথরঘাটা পৌরসভার প্রতিষ্ঠিত হয়ে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় উন্নিত হলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে উন্নতি হয়নি এক রত্তিও।

ফলে শহরের মুরগির বাজার, মাছের বাজার, কসাইখানা, ফল বাজার, কাঁচাবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এমনকি ঝোপঝাড়, জঙ্গল, নামে মাত্র থাকা ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ড্রেনগুলোর পানির প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা পানি, ঝোপঝাড়, জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনা থেকে জন্ম নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মশা। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনের বেলাতেও মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলেও মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পৌর শহরের অর্ধলক্ষ বাসিন্দাদের জনজীবন বিপর্যস্ত।

পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের গৃহিণী রোজিনা আক্তার,সুমি ইসলাম, বন্যা রাণি বলেন, আমাদের বাসার নিচ তলায় রাস্তার উপরে বর্জ্য রাখার কোন ডাস্টবিন না থাকায় আমরা প্রতিদিন বাসার যাবতীয় ময়লা টাকা দিয়ে অপসারণ করতে বাধ্য হচ্ছি।

আবুল কালাম আজাদ জলিল হুজুর বলেন, আমরা মশার দাপাদাপিতে ঠিক মত নামাজ পড়তেও পারছিনা। এছাড়াও পৌরসভা থেকে কোন ডাস্টবিন না দেয়ায় রাস্তায় রাস্তায় পলিথিন ভরা বর্জ্য পায়ে পায়ে লাথি খাচ্ছে।

এবিষয়ে পাথরঘাটা ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, পৌরশহরে মশা নিধনের কোন জনবল নেই। পদ খালি থাকা সত্ত্বেও জনবল বৃদ্ধিতে আগ্রহ নেই কতৃপক্ষের। এছাড়া ও যে বাজেট আসে তা ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু মশক নিধন বাস্তবায়ন করা হয়না। গত বছরের মশক নিধনের ঔষধ এখন ড্রাম ভরা অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি।

তবে পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেছেন মশা নিধনের কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যাপ্ত জনবল ও বাজেট রয়েছে। তবে বৃষ্টি থাকায় আমরা এখন স্প্রে দিতে পারছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাথরঘাটা পৌরসভায় যে কয়টি মশক নিধনে স্প্রে মেশিন রয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটি সচল রয়েছে। যা মাঝে মধ্যে ফটোসেশন ও পৌর ভবনের চতুর্দিকে স্প্রে করতে দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান, মেয়র সাহেবকে আমি বলেছি আমার পরিষদে মশক নিধনের একটি ফগার মেশিন সচল রয়েছে । সেটি তিনি শহরের মশক নিধনে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কেন তিনি সেটি করছেন না আমি বুঝিনা।

(এটি/এসপি/জুন ৩০, ২০২২)