নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফয়সাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনে প্রসূতি আকলিমা বেগমের (৩২) মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নওগাঁ সদর হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট ডা. সাদিয়া রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মুনীর আলী আকন্দ ও মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার বিজয় কুমার রায়।

এ প্রসঙ্গে নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে ভুল অপারেশন ও অব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে গত সোমবার (২৭ জুন) বিকেলে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালান মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কুমার রায় ও মান্দা থানার ওসি শাহিনুর রহমান তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

ইউএনও আবু বাক্কার সিদ্দিক এসময় ওই ক্লিনিকে গত শনিবার (২৫ জুন) রোগী ভর্তির রেজিষ্টার ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। একই সঙ্গে রোগী ভর্তি, অপারেশনে অংশ নেয়া সার্জন ও অজ্ঞানের চিকিৎসকের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়। এতে ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় মারা যাওয়া প্রসূতির অপারেশনের যাবতীয় নথি ও ক্লিনিকের কাগজপত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে দাখিলের নির্দেশ দেন ইউএনও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রসূতি আকলিমা বেগমের অপারেশনের বিষয়ে ফয়সাল ক্লিনিকের পক্ষে যেসব কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন এসএম হাবিবুল হাসান নামে একজন চিকিৎসক। অজ্ঞানের চিকিৎসক হিসেবে নাম ব্যবহার করা হয়েছে ডা. সামিউল ইসলামের। কিন্তু ডা. সামিউল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

এ প্রসঙ্গে অজ্ঞানের চিকিৎসক সামিউল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন (২৫ জুন) আমি নিজের কর্মস্থল রাজশাহী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রেমতলীতে দায়িত্ব পালন করেছি। একইদিন বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর মডেল হাসপাতালে একটি অপারেশনে অংশ নিয়েছিলাম। ২৫ জুন আমি মান্দাতে যাইনি। এরপরও ওই অপারেশনে ক্লিনিক কর্তূপক্ষ কেন আমার নাম ব্যবহার করেছে তা বলতে পারছি না। এটি সত্য হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিব।’
এ বিষয়ে অপারেশনে অংশ নেয়া চিকিৎসক এসএম হাবিবুল হাসানের মোবাইলফোনে দুইদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা রিসিভ না হওয়ায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আকলিমা বেগম নামে এক নারীর সিজারিয়ান করানো হয়। এটি ছিল তাঁর তৃতীয় সিজারিয়ান। অপারেশনের পর রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ক্রমেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। প্রসূতি আকলিমা বেগম উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের জোতবাজার এলাকার আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নুর স্ত্রী। বিষয়টি জনকন্ঠ, উত্তরাধিকার ৭১সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে।

(বিএস/এসপি/জুন ৩০, ২০২২)