টুঙ্গিপাড়ায় জোড়া সেতুতে ৩ গ্রামের মানুষের দুঃখ লাঘব
.jpg)
তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার গোপালপুর, ডুমরিয়া এবং পিঞ্জুরী ইউনিয়ন। ওই ৩ ইউনিয়নের সীমন্তে ৩ টি গ্রাম সোনাখালী, পূর্ব সোনাখালী ও তারইল। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা জেলা সদর ও ইউনয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল গ্রাম ৩ টি। এসব গ্রামে প্রচুর পরিমান সবজি, মাছ উৎপাদিত হয়। এছাড়া গরু মোটাতাজা করার জন্য এই গ্রাম ৩টির খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এতদিন ওই এলাকার ৩০ হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। উৎপাদিত পন্য তারা বাজারজাত করতে পারেন নি। গ্রামে বসেই পানির দামে সবজি, মাছ ও গরু বিক্রি করেছেন। ওই ৩ গ্রামের মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালী খালের ওপর জোড়া ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছে। জোড়া ব্রিজের একটি কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্ব সোনখালী ও অন্যটি ডুমরিয়া ইউনিয়নের তারাইল গ্রামের সড়কের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণের ফলে ৩ ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ও পণ্যপরিবহন সহজ হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেয়ে তারা উপকৃত হচ্ছেন। ওই ৩ গ্রামের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক জানান, টুঙ্গিপাড়ার-কোটালীপাড়া উপজেলার পশ্চাপদ সোনাখালী, পূর্ব সোনাখালী ও তারাইল গ্রামের অর্থনীতির চাকা সচল করতে আমরা টুঙ্গিপাড়ার সোনাখালী খালের একই স্থানে ২০২০ সালে জোড়া ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করি। সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণ করে কোটালীপাড়ার পূর্ব সোনাখালী গ্রামের সড়কের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২ মিটার দীর্ঘ আরেও একটি সেতু নির্মাণ করে ডুমরিয়া ইউনিয়নের তারইল সড়কের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের সোনাখালী, তারাইল ও কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের পূর্ব সোনাখালী গ্রামে ৩০ হাজার মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। তারা এখান ৩০ মিনিটের মধ্যে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারেন। সহজে উৎপাদিত পণ্য ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। এতে ওই এলাকার মানুষের জীবন মানের উন্নতি ঘটেছে। আর্থসমাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।
তারাইল গ্রামের বাসিন্দা এবং গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কৃষ্ণ বিশ্বা্স বলেন, আমাদের এলাকা বিল বেষ্টিত। আগে এখানে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা। শুস্ক মৌসুমে পায়ে হেটে চলাচল করতে হত। সোনখালী খালের ওপর ২টি বাঁশের সাঁকো ছিলো। এ সাঁকো দিয়েই ৩ গ্রামের মানুষ পারাপার হতেন। অনেক সময় সাঁকো পার হয়ে গিয়ে অনেকেই খালের মধ্যে পড়ে যেতেন। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া পৌঁছাতে আমাদের ২ থেকে ৩ ঘন্টা লেগে যেত। যাতায়াত, মালামাল পরিবহনে দুর্ভোগের কোন শেষ ছিল না। আমাদের এলাকার অসুস্থ রোগীদের উপজেলা সদরে নিতে ব্যাপক কষ্ট করতে হয়েছে। এতে রোগী ও স্বজনরা মারাত্মক ঝাক্কি ঝামেলা মধ্যে পড়েছেন। এখন ওই খালে জেড়া ব্রিজ করে দিয়েছে এলজিইডি। সাথে সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়েছে। এ কারণে এখন আমাদের দুঃখ কষ্ট লাঘব হয়েছে। আমাদের যাতায়াত সহজ হয়েছে। আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া পৌঁছাতে পারি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালী গ্রামের শরৎ চন্দ্র তালুকদার (৭৫) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই দুর্গম ৩ গ্রামে ব্রিজ, কালভার্ট ও রাস্তা করে দিতে পারবেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। তিনি এগুলো করে দিয়ে আমাদের জীবযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। আমরা এখন আমাদের উৎপাদিত সবজি, মাছ ও গরু সহজে বাজারজাত করে ভাল দাম পাচ্ছি। আমরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
ইজিবাইক চালক ও উত্তর সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস তালুকদার (২২) বলেন, আগে ব্রিজ ছিল না। এখন ব্রিজ হয়েছে। সেই সাথে রাস্তা পাকা করা হয়েছে। দ্রুত টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া যাতায়াত করা যায়। দিনে অন্তত ৭ শ’ থেকে ১ হাজার ৫ শ’ টাকা আয় করতে পারি। এখন আমরা ভাল টাকা আয় করে সুখে আছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের আবুল হাসান (৩০) বলেন, ছোট বেলায় এইসব গ্রামে নৌকায় আসতাম। তখন এখানে শুধু অথৈই পানি থৈথৈ করত। মনে হত এখানে কোন ব্রিজ বা রাস্তা হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা এটি। তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন। তাই বিচ্ছিন্ন ৩ গ্রামের সাথে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলা সদরের যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়েছে। এতে এই এলাকার জমির দাম বেড়েছে। অনেকেই এখানে কৃষি নির্ভর শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরাও এখানে জমি কেনার চেষ্টা করছি।
(টিকেবি/এসপি/জুলাই ১৫, ২০২২)