শেখ সাদ বীন শরীফ, নড়াইল : ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, সাহা পাড়ার ব্যবসায়ী আশোক সাহার ছেলে কলেজছাত্র আকাশ সাহা তার নিজের ফেসবুক আইডিতে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেন।

বিষয়টি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।

রাতের দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সাহাপাড়ার বেশ কয়েকজনের মিষ্টির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘর পুড়ে গেছে। এ ছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুরসহ ইট ছুড়েছে বিক্ষুব্ধরা।

দিঘলিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য প্রভাত কুমার ঘোষ বলেন, আকাশ সাহার ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলা করেছে। একটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

এদিকে খবর শুনে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সঠিকভাবে তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দেন।

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল (ওসির দায়িত্বে) জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। পুরো এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক লোকজন ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। ছেলেটির বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ছেলেটি পালিয়ে গেছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। ধর্ম অবমাননার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন।

এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।

এ নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

(এসবিএস/এএস/জুলাই ১৬, ২০২২)