উত্তম কুমার সান্যাল


দেবেশ চন্দ্র সান্যাল, পিতা মৃত- দ্বিজেন্দ্রনাথ সান্যাল, মাতা মৃত- নিলীমা সান্যাল, গ্রাম ও ডাকঘর-রতনকান্দি, ইউনিয়ন-হাবিবুল্লাহ্ নগর, উপজেলা-শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ। একজন মানবীয় ব্যাংকার। তিনি ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে ছিলেন। অত্যন্ত সুনামের সাথে আটত্রিশ বছরাধিক সোনালী ব্যাংকে বিভিন্ন শাখায় ম্যানেজার হিসেবে ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে গত ২৫/০৯/২০১৯ তারিখে এসপিও হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি একজন মানবীয় ব্যাংকার। তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাসময়ে যথাযথ ভাবে পালন করেছেন।

তাঁর কর্মদক্ষতা, বিশ্বস্থতা ও অন্যান্য গুনাবলীর জন্য কর্তৃপক্ষ ক্রমান্বয়ে ৬টি পদোন্নতী দিয়ে তাকে এসপিও পদে উন্নীত করেছিলেন। তিনি আমানত সংগ্রহ, ও শ্রেণী বিন্যাসিত ঋণ আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার পেয়েছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে প্রায় ১২ বছর ৫টি বিভিন্ন শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। তিনি ব্যাংকিং নিয়মনীতি মেনে সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছেন। ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনে সমাজের কল্যানে অতিরিক্ত যে সকল পালন করেছেনে। তা হলো-১, তিনি যখন লাহিড়ী মোহনপুর শাখার ম্যানেজার। মোঃ মনছুর আলীর মেয়ে বিয়ে নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিত হতে সহযোগীতা করেছিলেন।

বলতৈল গ্রামের মোঃ মনছুর আলী । তিনি ছিলেন সোনালী ব্যাংক লিঃ লাহিড়ী মোহনপুর শাখার একজন সঞ্চয়ী হিসাব ধরাক। তার একটি ছেলে বিদেশে থাকে। মাঝে মাঝে তার বাবার হিসেবে টাকা পাঠায়। গঠনাটি ২০০৯ সালের। যখন বৈদেশিক রেমিটেন্সের টাকা গ্রাহকের হিসাবে জমা হতে সময় লাগতো। আজ কালের মতো এত দ্রুত টাকা এসে হিসাবে জমা হতো না। ছেলের বৈদেশিক রেমিটেন্সের টাকার উপর ভরসা করে মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য করেছিলেন। ছেলে টাকা পাঠিয়েছে কিন্তু হিসাবে এসে জমা হয় নাই। মোঃ মনছুর আলী ছেলের টাকার ভরসায় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন করেছেন। দিশেহারা হয়ে বিষয়টি ম্যানেজার দেবেশ চন্দ্র সান্যালের কাছে বললেন। সব কথা শুনে ম্যানেজার বললেন, “আপনার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান নির্ধারিত দিনেই করার ব্যবস্থা করুন। আমি প্রয়োজনীয় সব টাকা দিব”। ম্যানেজার ব্যক্তিগত ভাবে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিলেন। যথাসময়ে অনুষ্ঠান হলো। তিন দিন পর তার ছেলের প্রেরিত টাকা হিসাবে জমা হলো।

তিনি হিসাব থেকে টাকা তুলেই প্রথম ম্যানেজারের টাকা পরিশোধ করে দিলেন এবং ম্যানেজারকে কৃতজ্ঞতা জানালেন। ২। তিনি সোহাগপুর (বেলকুচি উপজেলা শাখা) শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি অন্ধ মেয়ের জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিতে উল্লেখ যোগ্য সহযোগীতা করেছিলেন। এই শাখায় কর্মরত কালীন সময়ে তিনি অন্ধ, প্রতিবন্ধি মোঃ আব্দুর রশিদসহ প্রচুর মাইক্রো ক্রেডিট ঋণ দিয়েছেন। একবার ঈদ-উল-আযহা ঈদের মধ্যে নিজে ব্যাংকের মধ্যে অবস্থান করে তিনদিন তিনরাত ব্যাংকের ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড ডিউটির দায়িত্ব পালন করে ম্যাসেনঞ্জার মোঃ দানিয়াল আজমকে তিন দিনের ছুটি দিয়ে স্বপরিবার ঈদ করতে সহযোগীতা করেছিলেন। ২০১১ সালের কথা। তখন ব্যাংকে কোন গার্ড পোস্টিং ছিলো না। একজন ম্যাসেঞ্জার ২৪ ঘন্টা ব্যাংকের ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড ডিউটি করত। ম্যানেজার দেবেশ চন্দ্র সান্যালের মহানুভবতায় পরিবারের সবার সাথে ঈদ করার সুযোগ পেয়ে মোঃ দানিয়েল আযম ঈদ করে এসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দোয়া করেছিলেন। তিনি বলে ছিলেন “ এমন মানবীয় ম্যানেজার পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নাই”।

২০১০ সালে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে আত্মনির্ভরশীল করে দারিদ্র বিমোচনের জন্য আওয়ামীলীগ সরকার বেশ কিছু নতুন মাইক্রো ক্রেডিট ঋণ কর্মসূচী চালু করেন। যেমন, জাগো নারী, উন্মেষ, দারিদ্র বিমোচনে সহায়তা ঋণ কর্মসূচী, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রভৃতি। এই ঋণ কর্মসূচীর আওতায় ম্যানেজার দেবেশ চন্দ্র সান্যাল প্রচুর ঋণ দিয়েছেন। এলকায় তার ঈর্ষান্বিত সুনাম। এই সুনামের জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সাহসী জনতা ৫ সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করে পুরো এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিল।

সমাজ উন্নয়নে ম্যানেজারে ভূয়ষী প্রশংসা শুনে মুক্তিযুদ্ধ ও ব্যাংকিং সেক্টরে কৃতিত্বপুর্ণ অবদানের জন্য সাপ্তাহিক সাহসী জনতা গুণীজন পদক ২০১১ দিয়েছিল। তিনি ব্যাংকিং জীবনে প্রচুর ঋণ দিয়েছেন। তার নীতি ছিল -“ধার দেওয়া যেমন পূণ্যের কাজ, মানুষের কল্যাণে ঋণ দেওয়াও তেমন পূণ্যের কাজ”। তার ব্যক্তিগত আচার-আচরন ও মানুষের সেবামূলক মনভাবের কারণে যেখানেই চাকুরী করেছেন সেখানেই সুনাম ছিল। আজও তার সদ্ গুনের কথা প্রত্যেক এলাকার গ্রাহকেরা উদাহরণ হিসেবে দার করিয়ে থাকেন। জীবনে কেহ কোনদিন তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন নাই।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।