জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার পুরাতন ব্রিজঘাট থেকে ফিরিঙ্গবাজারের অভয়মিত্র খেয়া পারাপার ঘাটে ইঞ্জিন চালিত সাম্পানে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এখন ভাড়া যাত্রীপ্রতি ১৫ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ঘাট হলে এ ভাড়া নির্ধারণ করেছেন সমিতির লোকজন। একই ভাবে অভয়মিত্র ঘাট থেকে এপারের পুরাতন ব্রিজঘাট আসাও ১৫ টাকা ভাড়া। 

দীর্ঘদিন চলমান ১৩ টাকার ভাড়ায় তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে আবারো ৩ টাকা বেড়ে ১৫ টাকা করেছেন। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করছে না সমিতির লোকজন? এ বিষয়ে মাঝিদের তোয়াক্কা নেই। গত ৪ মাস যাবত সরেজমিনে এ ঘাট দিয়ে আসা যাওয়া করে তথ্য পাওয়া যায়, এপার থেকে ওপার। দৃশ্যমান ৪ মিনিটের নদী পথের ভাড়া এখন অঘোষিত ভাবে ১৫ টাকায় ঠেকেছে। কদিন আগে ১৩ টাকা ভাড়া থাকলেও সে সময় যাত্রীরা ২০ টাকা দিলে ভাংতির অভাবে ৫ টাকা ফেরত নিতে বাধ্য ছিলেন।

অধিকাংশ সাম্পান মাঝিরা ভাড়া তোলার সময় ভাংতি থাকলেও বের করে দিতেন না। তারা সুযোগ নেয় ১৩ টাকা হুবহু যাত্রীরা দিতে পারবেন না। কারণ ভাংতি সঙ্কট থাকবেই। ফলে, প্রতিনিয়ত কিছু যাত্রীরা ১৫ টাকায় দিয়ে ঘাট পার হয়ে আসছেন। কখনো উৎসব আয়োজন আসলেই বেকে বসেন মাঝিরা। আদায় করেন ১৫ থেকে ২০ টাকা। নিরুপায় হয়ে সাধারণ যাত্রী ও মহিলারা এই নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতির সদস্যরা যা বলেন মাঝিরা সেটাই করে থাকেন। মাঝিরা এ ছাড়া কারো কথা শোনতে চান না। আবার সাম্পান ভাড়ায় এই নৈরাজ্য বন্ধ করার জন্যও কেউ এগিয়ে আসছেন না। পুর্ব নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫ থেকে ৩ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও সকলে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ কিংবা চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকেও কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। প্রতিনিয়ত এ ঘাটে চলাচলকারী শিক্ষক আইরিন আক্তার, ব্যবসায়ি লেয়াকত আলী ও মনির আহমদ বলেন, ‘১০ টাকার ভাড়া ১২ টাকা নিলে মানুষের কিছুটা ভোগান্তি কম তো। কিন্তু ১৩ টাকা ভাড়া কোন যুক্তিতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারাই ভালো জানেন। আবার অনেকেই এটা সমিতির পরিকল্পিত একটা ধান্ধাবাজি ছাড়া কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কেননা অনেক সময় ১০ টাকা ভাড়া দিতে চাইলে চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। এখন তারা ১৫ টাকা নিচ্ছেন। এক লিটার তেলে ২/৩ বার আসা যাওয়া গেলেও মাঝিরা দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন।’

স্থানীয় ব্যবসায়ি খোরশেদ আলম বিপ্লব বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৩/১৫ টাকার ভাড়া ১২ টাকা করা খুবই জরুরী। কারণ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যখন কানে আঙ্গুল কিংবা তুলা দিয়ে বসে রয়েছেন, সেক্ষেত্রে প্রশাসন ছাড়া এ অরাজকতা কেউ থামাতে পারবে না। অথচ সাম্পান মাঝিরা ১০ টাকায় পোষাতে না পারলে দুজন লোক বেশি নিতে পারেন। সেটাও করছেন না। আবার চাইলে তাঁরা ১২ টাকায় চলে আসতে পারেন কিন্তু না! কারণ ১৩ টাকার ওছিলায় ১৫ টাকা হালাল করার চেষ্টায় তাঁরা স্থির ছিলেন। সেটাই বাস্তবায়ন করছেন। অতিসত্বর এ নৈরাজ্য বন্ধ করা জরুরী।’

চরপাথরঘাটা এলাকার ব্যবসায়ি ঘাটের নিয়মিত যাত্রী নাছির উদ্দিন ও কালা মিয়া বলেন, ‘যারা দুষ্ট তারা কথা শোনে না। তারা এখন ১৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। লাইফ জ্যাকেটহীন অনিরাপত্তায় যাত্রী পারাপার ও বাড়তি ভাড়া বন্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’

চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ১৩ টাকা ভাড়া দিতে গিয়ে ভাংতি না থাকায় নানা সমস্যা হয় বলে যাত্রীরা আমাদের কাছেও নানা অভিযোগ করছেন। আমরা মাঝিদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি যাত্রীদের কাছে ভাংতি না থাকলে ১২ টাকাই নিতে। তাতে মাঝিরা অপারগতা প্রকাশ করতে পারবে না। যদি এরপরেও মাঝিরা যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। এছাড়াও সামনে সমিতির বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। নতুন করে ভাড়ার বিষয়ে।’ অথচ বৈঠকের আগেই ১৫ টাকা আদায় শুরু করে দিয়েছেন মাঝিরা। কিছুতেই এ ঘাটে নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না।

কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী বলেন, ‘ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে অনেক যাত্রী সাধারণ ১৩ টাকার ভাড়া বিষয়ে অসন্তোষ বলে আমাদের জানাচ্ছেন। কারণ ১৩ টাকা ভাড়া দিতে গিয়ে ভাংতি থাকে না। তিন টাকা বেজোড় সহজে মিলে না। তাই আমিও দায়িত্বশীল হিসেবে ব্রিজঘাট সমিতির সভাপতি সম্পাদককে অনুরোধ করব বৈঠকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে। চাইলে দু’একজন লোক বাড়তি নিতে পারে। তাহলে সমন্বয় ঘটবে। তেমন ক্ষতি হবে না।’

সদরঘাট নৌ পুলিশের ওসি এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যাত্রীদের সেবার বিষয়ে কতৃপক্ষকে সব সময় সজাগ থাকতে হয়। নৌ পথে যাত্রী পারাপার নিরাপদ করতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘কিছুতেই সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি করা যাবে না। যদি যাত্রীরা অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

(জেজে/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২২)