রঘুনাথ খা, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: রুহুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক ডা: কামরুজ্জামানের স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আগামি ১০ আগষ্ট সাতক্ষীরায় আসছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি।  গত ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব সারওয়ার মুর্শিদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ২২ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: মো: রুহুল কুদ্দুছ (বিএনপি সমর্থক) ২০২০ সালের নিয়োগকৃত ২২ জনের মধ্যে ৬ জনের নিয়োগ ইচ্ছামত বাতিল করে নতুন ১১ জনসহ ৩৩ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। আবার ৩ দিন পর ২৯ জানুয়ারী আবারো ওই তালিকা থেকে দুইজনকে বাতিল করে আরো একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করেন। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী কোন কর্মীকে বাদ দিতে গেলে অবশ্যই তাকে শোকজ বা কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের নোটিশ না করেই মেহেদী হাসান, নুর জাহান, সাহেব আলী, আবু সাঈদ, ইদ্রিস আলী, রাকিবুজ্জামানকে বাদ দেওয়া হয়।

চাকুরি হারানো চার যুবকদের পক্ষে মেহেদী হাসান গত ২৬ মে মহামান্য হাইকোর্টে ৬৩০৩/২০২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। গত ৫ জুন বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম ও মহিউদ্দীন শামিম বাদ দেওয়া আউট সোর্সিং এর চার কর্মীর চাকুরিচ্যুত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণকে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। একই আদেশে তাদেরকে পূর্ণবহালের নির্দেশ দিয়ে মেডিকেল কলেজের নোটিশ বোর্ডে নামের তালিকা টাঙিয়ে দিতে বলা হয়। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে বিবাদীরা উচ্চ আদালতের কোন রির্দেশ পালন করেননি বলে অভিযোগ।

এর আগে চাকুরিহারা নুর জাহান আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দিলেও তিনি ওই লিগ্যাল নোটিশেরও কোন জবাব দেননি। এরপর ভুক্তভোগীরা চাকুরি ফেরত পাওয়ার দাবিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু অজানা কারনে তাদের কাউকে বহাল না করে এবং আদালতের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়্যতে রয়েছেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: রুহুল কুদ্দুস।

এছাড়া ২০১৮ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ডাঃ রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার অনিয়ম দুর্নীতি দ্বিগুনহারে বেড়ে গেলেও হাসপাতাল পরিচালণা পরিষদ কর্তৃপক্সকে ম্যানেজ করে চলায় তার বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। এমনকি সপ্তাহে একদিন কলেজ করা অর্থোপেডিকস সার্জেন্ট ড্যাব নেতা ডাঃ কামরুজ্জামান ডাঃ রুহুল কুদ্দুসের শিকক্ষ হওয়ায় তাদের সমর্থক ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেডিকেলে কাজ করে বাকী সময় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সময় পার করতেন। ডাঃ কামরুজ্জামানের কথামত কাজ না করতে রাজী হওয়ায় নাক, কান ও গলার রোগ বিশেষজ্ঞা ডাঃ জাহিদ হাসানকে বরিশাল জোনে বদলী করা হয়।

এ ছাড়া ডা: রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে তার গাড়ি চালক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি কোয়ার্টার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও অনিয়মিত কর্মীদের কোয়ার্টার ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় গত ৬ ফেব্র“য়ারি ওইসব অবৈধ সুবিধাভোগীদের কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার জন্য ডাঃ রুহুল কুদ্দুস নোটিশ দিলেও গত ছয় মাসেও তা কার্যকর হয়নি।

এছাড়া ডা: রুহুল কুদ্দুস হাসপাতালের বিভিন্ন ক্রয় কমিটি ও টেন্ডার যাচাই-বাচাই সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হওয়ায় মালামাল ক্রয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ছাত্র কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দ, স্বেচ্ছাসেবকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে আর্থিক অনিয়ম করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ডাঃ রুহুল কুদ্দুস বলেন, তদন্ত সম্পর্কিত একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন। তবে বিস্তারিত মোবাইলে না শুনে মেডিকেল কলেজে আসার জন্য আহবান জানান তিনি।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০২২)