অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের বড় কৃষক ছমির উদ্দীন বিশ্বাস দশ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে এখন হতাশ। রোপা আমন ছাড়াও মাঠে তার ১৫ বিঘা জমিতে আউস ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবণে বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মটর। এতে তার লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। একই গ্রামের জামাল উদ্দীন বিশ্বাস তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন তেলের দাম না কমালে চাষে লোকসান হবে। অর্জিত হবে না লক্ষ্যমাত্রা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মজনুর রহমান এবছর সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। প্রতিবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করতেন। কিন্তু এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। তার উপর নেই বৃষ্টি। খরায় পুড়ছে ঝিনাইদহসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চল। ফলে কৃষকরা ডিজেল চালিত যন্ত্রের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এতে বাড়ছে খরচ। ফলে ঝিনাইদহে কৃষিতে বিপর্যয় ও উৎপাদন ঘাটতির আশংকা দেখা দিয়েছে।

কৃষক ছমির উদ্দীন জানান, রোপা আমন বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি নেই। ফলে বিঘা প্রতি সেচ বাবদ অতিরিক্ত ১২০০ টাকা গুনতে হবে। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

হরিণাকুণ্ডুর শীতলি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ধান নিড়ানো, ধান কাটা, ধান লাগানো ও ধান মাড়াই করা সব কাজেই জোন (কামলা) লাগছে। কিন্তু জনের দামও বেড়ে গেছে। তারপরও রয়েছে ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ, ধান বাড়িতে আনা ও ধান মাড়াই।

রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষক সাকেদ আলী জানান, কৃষি নির্ভর এই দেশে সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এক সময় কৃষকরা চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি জানান, কৃষকদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে সেচ ও সার। এই দুটোর দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মানুষ নিজে খাওয়ার জন্য ছাড়া বিক্রির জন্য ধান চাষ করতে আগ্রহ হারাবে।

শৈলকূপার ফুলহরি গ্রামের কৃষক গোলাম নবি ও আতিয়ার রহমান জানান, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারনে আমার মতো উপজেলার সব কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষক ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারনে ঠিকমত সেচ দিতে পারছে না। যে কারনে শৈলকূপা এলাকায় রোপা আমন ও সবজি চাষে লোকসানের আশংকা করছেন তারা। সাধুহাটির কৃষক বাবলুর রহমান জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারনে সেচসহ অনান্য খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার লোকসান গুনতে হবে। অনেক কৃষক তেলের দাম কমানো বা যারা প্রকৃত কৃষক তাদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে ডিজেল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, ঝিনাইদহ জেলায় রোপা আমন এক লাখ চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের অক্ষ্যমাত্রা ছিল। বুধবার পর্যন্ত (১০ আগষ্ট) পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৫৩ হাজার ২৬২ হেক্টর। এছাড়া দুই হাজার ৫ শত ৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলায় দুই লাখ কৃষক পরিবার আছে। কৃষকরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়নি। আমরা রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। গ্রামের কৃষকদের দাবি সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের এবছর উৎপাদন মুল্য বেড়ে যাবে, সেই সাথে ক্ষতির মধ্যে পড়বে কৃষকরা।

(একে/এএস/আগস্ট ১০, ২০২২)