কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জর্জ একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালীন রেজুলেশন খাতায় লিখিত পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণীর একটি পৃষ্ঠা ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ওই জিডি করা হয়। বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুল হাসানের থানায় জিডি করার ৪ দিন পর প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা থানায় জিডি করেন। উপজেলার সর্ববৃহৎ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের এ দ্বন্দ্ব এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। 

প্রধান শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জুলাই প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ম্যানেজিং কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিগত সভার আলোচ্য সূচি বিদ্যালয়টির সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলামের কারিগরি শাখা হতে বিধিবহির্ভুতভাবে সম্মানী প্রদানের বিষয়ে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য আপত্তিপূর্বক বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন সভাপতি। এক পর্যায়ে সভাপতি কামরুল হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে কার্যবিবরণীর একটি পাতা ছিঁড়ে নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

এছাড়াও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে তিনি প্রধান শিক্ষককে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে থাকেন। বিদ্যালয়টির স্বার্থে এসব অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কারিগরি শাখায় দায়িত্বরত শিক্ষক কর্মচারিদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত বেতনভাতায় সভাপতি স্বাক্ষর করেননি। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত করছেন বলেও সভাপতির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ।

গত ৫ আগস্ট বিষয়গুলো উল্লেখপূর্বক বোয়ালমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা।

এর আগে গত ৩১ জুলাই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল হাসান থানায় একটি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২৮ জুলাই বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, কো অপ্ট সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য অশোক দাসের যোগসাজশে, সহযোগিতায় এবং প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ম্যানেজিং কমিটির অপর অভিভাবক সদস্য মো. ইকবাল হোসেন রেজুলেশনের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান এ ব্যাপারে জানান, আমার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের আনিত অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনগড়া। প্রধান শিক্ষকের প্ররোচনায় রেজুলেশনের পাতা ছিড়েছে কমিটির এক সদস্য। এ বিষয়ে আমি থানায় একটি জিডি করেছি।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, সভাপতি কামরুল হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে কার্যবিবরণীর একটি পাতা ছিঁড়ে নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় আমি থানায় জিডি করেছি।

এলাকার সচেতন অভিভাবকগণ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, সভাপতি উদ্যেশ্য প্রনোদিতভাবে এ খেলায় যুক্ত হয়েছেন। কারণ তিনি সাজানো নাটকের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে ল্যাব সহকারী, করনিক সহ পদে কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

(কেএফ/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২২)