জসিম উদ্দিন জুয়েল, টঙ্গী : বছর পেরিয়ে আসলেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) এর সাবেক মেয়র  জাহাঙ্গীর আলম থাকছেন আলোচনা ও গুঞ্জনের শীর্ষে। সম্প্রতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বহিস্কৃত মেয়রের স্বপদে ফিরার গুঞ্জন। যদিও এ ব্যাপারে সাবেক মেয়রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ সর্বত্র সিটির স্থবির হয়ে পড়া উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির জন্য নৌকার মনোনয়নে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহে তেমন ভাটা পড়েনি। এখনো জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে নির্দোষ এবং গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার মনে করেন। জাহাঙ্গীর আলম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুতই স্বপদে ফিরবেন বলে তারা আশাবাদী।

উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ক'জন নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা নিয়ে সাবেক মেয়রের একটি বিতর্কিত ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদে রাজপথ গরম হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ঢাকায় গত বছর নভেম্বরের এক শুক্রবারে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারসহ তার প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে মেয়ের পদে থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মেয়ের পদ থেকেও বহিষ্কার হন তিনি। ভিডিওটি সুপার এডিট উল্লেখ করে সাবেক মেয়র তখন থেকেই নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে আসছেন।

তিনি বলেন, তবু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যেকোনো ব্যবস্থাই মাথা পেতে নিবেন তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী কতৃক গৃহীত কোনো পদক্ষেপের বিপরীতে কখনো প্রতিবাদ ও আইনি পক্রিয়াতেও যাবেন না।

সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা ২০১৩ সালে মেয়ের পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক চেয়ে বঞ্চিত হলে এড. আজমত উল্লাহ খান নৌকা প্রতীক পেয়ে বিএনপির প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যান জাহাঙ্গীর আলম। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে গাসিক মেয়ের নির্বাচিত হন। জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রজীবন থেকেই নিজেকে আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত কর্মী হিসেবে একবার সিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আওয়ামী পরিবারের বাইরে নিজের কোনো অস্তিত্ব, অবস্থান নেই বলে স্পষ্ট জানান তিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারাগাছ হিসেবে খ্যাত। অনেকেই মনে করে মেয়ের হয়ে তিনি গাজীপুর সিটির উন্নয়নে এযাবৎ কালের বৃহৎ বাজেট এনে দ্রুততম গতিতে সিটির যানজট নিরসনে বিকল্প অভ্যন্তরীণ প্রশস্ত যোগাযোগ পথ তৈরি, সিটির ওয়ার্ডগুলোর প্রধান প্রধান রাস্তা প্রশস্তকরণসহ টেকসই রাস্তা, মশা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন বলেই তাকে ঘিরে নগরবাসীর আলোচনা থামছেনা। গাজীপুর সিটির উন্নয়ন কাজ থেকে শুরু করে দলীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জাহাঙ্গীর আলম প্রানবন্ত ও গতিশীল। তিনি জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন গড়ে সেখান থেকে মেয়র হবার আগেই সামাজিক উন্নয়ন, ধর্মীয় উপাসনাগুলোর উন্নয়ন, মহাসড়ক যানজট মুক্ত করতে নিজস্ব ট্রাফিক সহায়তাকারী দল গঠনসহ আলেম সমাজের মাসিক সম্মানি প্রদান, স্কুল-কলেজে বিশেষ অবদান রেখে সর্বসাধারণের আস্থালাভ করতে সক্ষম হন। নিজের বাড়িকে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের বাড়িতে পরিণত করেন জাহাঙ্গীর আলম। এতে তাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের বাড়তি আগ্রহ কাজ করছে বলে মনে হয়।

এতো অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিজের আস্থায় আনার এযেনো এক জাদুকরী দক্ষতা। বহিস্কৃত হবার পরে তার কান্নায় চারিদিকে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হলেও সবকিছু ছাপিয়ে তিনি বেশ শান্ত ও স্থির থেকে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। এবারের জাতীয় শোক দিবসেও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দোয়া মাহফিল ও গণভোজের আয়োজন করেন। জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবছর জাতীয় শোক দিবসে ওয়ার্ডগুলোতে নিজ অর্থায়নে গরু-খাসি দিয়ে থাকেন যেনো কর্মীদের এই দিবসকে ঘিরে কোনো আর্থিক চাপে পড়তে না হয়। সবকিছু মিলিয়ে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের গুঞ্জন যেনো থামছেই না।

(জেইউজে/এএস/আগস্ট ১৮, ২০২২)