রিপন মারমা, রাঙামাটি : দীর্ঘ চার মাস পর কাপ্তাই হ্রদে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। চিরচেনা সেই রূপ এখন মৎস্য অবতরণ ঘাট ও হ্রদ জুড়ে।

মধ্যরাত থেকে মাছ আহরণ শুরু হওয়ার পর জেলেদের আহরণকৃত মাছ ছোট ছোট বোটে করে নিয়ে আসছে বিএফডিসি’র অবতরণ ঘাটে। রাতভর আহরণ করা মাছ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকালে ঘাটে আসেন জেলেরা। প্রথম দিনের মাছের আকার ছোট হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বুধবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে মাছ আহরণ শুরু করেন জেলেরা। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে সেসব মাছ ছোট ছোট বোটে করে বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে নিয়ে আসেন। তবে আহরিত মাছ আকারে ছোট হওয়ায় হতাশ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বিএফডিসি’র আশা, গতবছরের চেয়ে এবারও রাজস্ব আহরণ বেশি হবে। বিএফডিসি সূত্র মতে, প্রথম ৪ ঘণ্টায় ৩৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছে। গত বছর কাপ্তাই হ্রদ হতে ১৭ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন মৎস্য আহরিত হয়, সেখান থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রায়। ২০২২ সালে হ্রদে ৬০ মেট্রিক টন পোনা অবমুক্ত করা হয়।

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। তবে পানি কম থাকায় নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয় আরও দুই দফায় ১৭ দিন। তবে বিলম্বে হলেও মাছ ধরা শুরু হওয়ায় খুশি জেলেরা।

দীর্ঘদিন পর অবতরণ ঘাটে এখন ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। শ্রমিকরা ব্যস্ত একের পর এক বরফ ভাঙতে। অবতরণকৃত মাছ সরকারি রাজস্ব মিটিয়ে ড্রামে প্যাকিং শেষে ট্রাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের হাঁকডাকে সরগরম পুরো ঘাট।

মাছ ব্যবসায়ী মো আলতাফ সওদাগর বলেন, দীর্ঘদিন পর ব্যবসা শুরু করলেও মাছের আকার ছোট থাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই মাছ ঢাকায় বিক্রি করতে পারবো কিনা জানি না। আমাদের দাবি ছিল আরও কিছুদিন বন্ধ রাখার। তাহলে এই মাছের আকার আরও বড় হতো। আমরা লাভবান হতাম।

অন্যদিকে মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় খুশি জেলেরা। কাপ্তাই উপজেলা মৎস্যলীগের সভাপতি মোঃমোস্তাক ভান্ডারি জানান, দীর্ঘদিন বেকার সময় কেটেছে। মাছ ধরা শুরু হওয়ায় জেলেরা হ্রদে মাছ শিকারে নেমেছে। এখন পর্যন্ত ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে চাপিলা মাছটি এবার আকারে কিছুটা ছোট। প্রথমদিনে কাচকি, চাপিলার আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি), রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম দিকে জালে ছোট মাছ বেশি আসে। কয়েকদিন পর এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। হতাশ হওয়ার কিছুই নাই, প্রথমদিনের মতো এভাবে মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে গত বছরের চেয়ে রাজস্ব আয় বেশি হবে বলে আশাবাদী।

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ থাকে।

(আরএম/এএস/আগস্ট ১৮, ২০২২)