মোহাম্মদ সজীব, ঢাকা : বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করা হয়। কলেজের সনদও বাতিল করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি নিবন্ধন দিচ্ছে না। বর্তমানে যারা অধ্যয়ন করছেন তাদের দায়িত্ব নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজের ছয়টি ব্যাচের ১৮০ শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

২০১৩ সালে রাজধানীতে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস না হওয়া, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার পাশাপাশি রোগীর স্বল্পতা থেকে শুরু করে নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০১৭ সালে কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের দাবিতে টানা ১২ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। ৬ আগস্ট থেকে তারা আন্দোলন করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।

এমন অবস্থায় অনিশ্চয়তা ও হুমকির মুখে চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। শুধুমাত্র ২০১৭ সাল পরবর্তী সময়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎও প্রায় অনিশ্চিত বলে জানান শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মাইগ্রেশনের দাবি জানানো হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর বলছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে মাইগ্রেশনের সুযোগ নেই।

অন্যদিকে বিএমডিসি বলছে, কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েক বছর ধরেই নানা সমস্যা চলছে। একাধিকবার পরিদর্শন শেষে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের কথা বলা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সমস্যাগুলো সমাধান না করলেও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কেয়ার মেডিকেল কলেজ উলটো শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে থাকে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই। আর এসব সংশোধন না হওয়ার কারণে অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই।

কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে। কিন্তু দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা প্রায় আট মাস পিছিয়ে যায়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় যার ফলাফল প্রকাশ করা হয় একই বছরের ১৮ অক্টোবর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সকল সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ শুরু হয় ১ নভেম্বর থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এত মাস পার হলেও আমাদের সেই সৌভাগ্য এখনো হয়নি।

কেয়ার মেডিকেল কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সিলভিয়া মীম বলেন, বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনের আওতায় না থাকার কারণে আমরা ইন্টার্নশিপ করতে পারছি না-কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের এমনটাই জানিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসা যায় সে বিষয়ে আমাদের কিছুই বলেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। উলটো তারা আমাদের বলে হাসপাতালে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথমদিকে তাও বলতো যে ডিসেম্বরের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে যদি আমরা ডিউটিতে জয়েন করি। আমাদের অভিভাবকদেরও একই কথা বলত। পরবর্তীতে ডিউটিতে জয়েন করলেও দেখা যায় কোনো পদক্ষেপ তারা নেয় নাই। উলটো প্রায় ১৯-২০ দিন ডিউটি শেষে যখন কোনো অগ্রগতি দেখা যায় নাই তখন আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাই বিষয়টি।

বুহস্পতিবার আন্দোলনরক শিক্ষার্থীরা জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে রিট করে এবং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তবে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা বিএমডিসি অনুমোদন পাননি।

কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী তৌসিক ও অর্ণব বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় ৯ মাসেও শুরু হয়নি। এর আগে বিএমডিসির অনুমোদন আনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪ মাস সময় নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার মাস পার হলেও আশানুরূপ কিছু করতে পারেনি। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কথা বললে কলেজ কর্তৃপক্ষ মিথ্যা আশ্বাস দেয় এবং কালক্ষেপণ করে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-ভর্তির পর থেকে নাজুক পরিস্থিতি ও চিকিৎসা শিক্ষার অনুপযোগী পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিএমডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক ও ক্লিনিক্যাল বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান, লেকচারার, সিএ, রেজিস্ট্রার নেই। হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর রোগীর সংখ্যা নগণ্য। অধিকাংশ সময় ওয়ার্ডগুলো রোগী শূন্য থাকে। বিএমডিসি থেকে একাধিবার সমস্যা সংশোধন করতে বলা হলেও কর্তৃপক্ষ আশানুরূপ কিছুই করেনি।

এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বর্জন করে কলেজ প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার সহযোগিতা তারা পায়নি। শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও করেছেন কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায় নি

এ ব্যাপারে জানতে কেয়ার মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান বা পরিচালাক কাওকে অফিসে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেও সাড়া দেননি।

(এস/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০২২)