বাগেরহাট প্রতিনিধি : মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমুদ্রে আসড়ে পড়ছে বিশাল বিশাল ঢেউ। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে টিকতে না পেরে সমুদ্রে ইলিশ আহরণে থাকা কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, ভেদাখালীর অফিস খাল, কটকা, কচিখালী, হিরন পয়েন্ট, বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ফিশারীঘাট, শরণখোলার রায়েন্দ, রাজেশ্বর, পূর্ব খোন্তাকাটা, রাজৈর, মোংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জসহ উপকূরের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এদিকে দিনভর বৃষ্টিসহ ঝড়োা হওয়া বয়ে যাওযায় মোংলা বন্দর ও আউটারবারে পন্য ওঠানামার কাজ দারুর ভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দরের হারবার বিভাগ।

সমুদ্রগামী মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার ও শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিাবর সন্ধ্যা থেকে সাগরে আসড়ে পড়ছে বিশাল বিশাল ঢেউ। সাগরে জাল ফেলতে পারছে না জেলেরা। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে টিকতে না পেরে গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণে থাকা হাজার হাজার ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে ওঠায় বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৩ হাজার জেলে ফিশিং ট্রলার বৃহস্পতিবার রাত থেকে সাগর ছেড়ে এখন সুন্দরবনসহ কূলে অবস্থান করছে। শরণখোলার শতাধিক ট্রলার সুন্দরবন ও উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় নিরপাদ আশ্রয় নিয়েছে। একই ভাবে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কেবি ফিশারী ঘাটে শতাধিক ফিশিং ট্রলার ঘাটে নোঙর করেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবারও তিন নম্বর সংকেতের মধ্যে মোংলা বন্দর জেটিসহ আউটারবারে ফেয়ারওয়ে বয়া, হিরণপয়েন্ট, হাড়বাড়ীয়া পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণ কাজ বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া কারনে ভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার। এখনো বন্দরে পন্য ওঠানামার কাজ চলছে। তবে, আমরা আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, বৈরী আবহাওয়া কারনে সাগর ফুসে উঠছে। এ অবস্থায় সাগরে টিকতে না পেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, ভেদাখালীর অফিস খাল, কটকা, কচিখালী, হিরন পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে শতশত ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সুন্দরবনের উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চালসহ নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে, সুন্দরবনের নদ নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি শুক্রবার সকাল ৬টায় নিম্নচাপে রূপ নেয়েছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্ন চাপের প্রভাবে মোংলাসহ দেশের ৪টি সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারির পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা সমুহ ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ফের সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ফিশিং ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে মোংলা বাগেরহাটসহ উপকূলে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বইছে বলে জানান এই আবহাওয়াবীদ।

(এসএকে/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২২)