নিউজ ডেস্ক, ঢাকা : এক পেশাদার পতিতাকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় এক মাস আগে ভারতের মুম্বাইয়ের জুহুতে তারা রোড এলাকায় অবস্থিত বস্তির একটি ঘর থেকে এক পুলিশ কনস্টেবলের আংশিক অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার ও এ হত্যাকান্ডের ঘটনায়। সম্প্রতি তদন্তে ওই হত্যাকান্ডের পেছনে এক নির্মম কাহিনী উদঘাটিত হয়েছে, যে কারণে ওই পতিতা তাকে হত্যা করতে বাধ্য হন।

২৯ বছর বয়সী ওই নারী পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশকে বলেন যে, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তিনি ওই হত্যাকান্ড ঘটান। কারণ ওই পুলিশ কনস্টেবলই তাকে পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করে তার জীবনটা ধ্বংস করেছে। ওই নারী আরও বলেন, তাকে হত্যার পর তিনি সহজেই পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে বরং তার কক্ষে ফিরে যান এবং পুলিশ কনস্টেবলের মৃতদেহে আগুন ধরিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত পুলিশ বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। দূর্নীতিপরায়ণ পুলিশদের সতর্ক করার জন্যই তিনি এমনটা করেন বলে জানান ওই নারী।

ওই নারী পুলিশকে আরও জানান, সৎ মায়ের নির্যাতনে শৈশবেই তার দূ:খ দূর্দশার শুরু হয়। সৎ মায়ের নির্যাতন সইতে না পেরে ২০০২ সালে তিনি বিহারে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বাই চলে আসেন। সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। মুম্বাই আসার পরপরই ওই পুলিশ কনস্টেবল তাকে কাজ পেতে সহায়তা করার কথা বলে জুহুর ওই বেশ্যালয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। তিন বছর আগে ওই পুলিশ কনস্টেবলের সাথে তার ফের দেখা হয়। এবার ওই পুলিশ সদস্য তার উপর যৌন নিপীড়ন শুরু করে। আর এতেই সে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পুলিশ তদন্তে ওই নারীর সব দাবির সত্যতাই খুঁজে পেয়েছে। বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকা ওই নারী যৌনবাহিত মরণব্যাধিতে ভুগছেন। তার একটি চার বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। অন্য যৌন কর্মীরা তার সন্তানের দেখাশোনা করছেন। পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী আরও জানান, ২০০২ সালে মুম্বাইয়ে আসার পর তিনি একটি ট্রেনে চড়ে বান্দ্রায় যান। সেখানে এক মধ্যবয়সী নারী তাকে আশ্রয় দেন। কিন্তু ওই নারীর স্বামী তাকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।

এরপর ওই নারী তাকে পালিয়ে যেতে বললে সে মুম্বাইয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য আরেকটি ট্রেনে চড়ে বসে। কিন্তু রাতের বেলা ওই কনস্টেবলসহ তিন পুরুষ তাকে সহায়তার কথা বলে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। এরপরই ওই কনস্টেবল তাকে পতিতালয়ে নিয়ে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এর কয়েকবছর পর তিনি মুম্বাইয়ের জুহুর পতিতালয় থেকে পালিয়ে বান্দ্রায় চলে যান। সেখানে তিনি একটি ছোট কারখানায় কাজ নেন এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এক সহকর্মীকে বিয়ে করেন। কিন্তু একটি সন্তান হওয়ার পরই তার স্বামী তাকে ত্যাগ করেন।

এরপর মুম্বাইয়ে ফিরে এসে পুনরায় পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেসময় এক অভিযানে পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। ঘটনাক্রমে ওই পুলিশ টিমে সেই কনস্টেবলও ছিল। ওই কনস্টেবল তাকে ছেড়ে দিয়ে তার ফোন নম্বর নেন এবং পুনরায় তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ওই পুলিশ কনস্টেবল তাকে যৌন নিপীড়ন করতে আসলে নেশাজাতীয় দ্রব্যের সাথে চেতনা-নাশক মিশিয়ে তাকে খাইয়ে দিয়ে অজ্ঞান করেন। এরপর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। তাকে হত্যার পর সেদিন রাতে তিনি এক বন্ধুর বাসায় পালিয়ে যান। কিন্তু পরের দিনই তিনি ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি ওই কনস্টেবলের মৃতদেহ একটি তোষকে পেঁচিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। কারণ তিনি খুনের বিষয়টি প্রকাশ্য করতে চেয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে মূলত দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদেরকে সতর্কতা বার্তা পাঠাতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেন ওই নারী।

(ওএস/পি/অক্টোবর ০৮, ২০১৪)