দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাগুরার মহম্মদপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ১১টি দোকানে লুট হয়েছে এবং ৭ ব্যক্তি আটক হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনায় উপজেলার বিনোদপুর ও ঘুল্লিয়া গ্রামবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিনোদপুর বাজারে ঘুল্লিয়া গ্রামের ব্যবসায়ীদের দোকান বেছে বেছে লুট করা হয়েছে। বিনোদপুর গ্রামের সংঘবদ্ধ লোকেররা এই লুটতরাজ করেন বলে জানা যায়। এ ঘটনার পর নানা আশঙ্কায় বুধবার সকাল থেকেই বিনোদপুর বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাট খুলছেন না ব্যবসায়ীরা। এলাকায় পুলিশের পাশাপাঁশি র‌্যাব সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। 

সুত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে গ্রীস্মকালীন স্কুল ও মাদ্রাসা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করে রাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা। টাইব্রেকারে ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরাজিত হয়। এরপর ঘুল্লিয়া দাখিল মাদ্রাসা একাদশের খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষ রাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় একাদশের খেলোয়াড়দের উপর চড়াও হয়ে মারধোর করে। পরে এ বিষয়টি ঘুল্লিয়া ও বিনোদপুর গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘাতের রুপ নেয়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ বিষয়টি সমাধানের জন্য মঙ্গলবার রাতে থানায় ডাকা হয় উভয় পক্ষকে। আর কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেবেন না মর্মে দুই পক্ষই অঙ্গিকার করেন। এরপর থানা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যাবার পথে যশপুর পৌছলে ঘুল্লিয়া গ্রামের লোকজন বিনোদপুর গ্রামের রাজিব (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে মারাত্বক আহত করে। তাকে প্রথমে মাগুরা পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাজিব বিনোদপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলী বিশ^াসের ছেলে।

মঙ্গলবার রাতে রাজিবের উপর হামলার পর ফুসে ওঠেন বিনোদপুর গ্রামের মানুষ। এদিন মধ্যরাতে বিনোদপুর বাজারে ঘুল্লিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী এমন ১১টি দোকান লুট হয়। এরমধ্যে অনিমেষের কাপড়ের দোকান, মিন্টুর কসমেটিকের দোকান, সাজ্জাদের স্যান্ডেলের দোকান, বক্কার শিকদারের ভূষির দোকান, ইলিয়াসের পার্টসের দোকান, হাসানের মুদি দোকান, মাববুব আলমের সার-কীটনাশকের দোকান, শাহজাহান শিকদারের হার্ডওয়ারের দোকান, বকুল মোল্যার স্যান্ডেলের দোকান, সেলিম জাবেদের ডেকোরেটরের দোকান এবং ইলিয়াসের মুদি দোকানের মালপত্র-পণ্য ও নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়।

বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সরেজমিনে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিনোদপুর বাজার ও বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজারের ৯৯ ভাগ দোকানই বন্ধ। মহম্মদপুর ও মাগুরার থানা পুলিশের পাশাপাঁশি র‌্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে গোটা বাজারে।

এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি শুধুমাত্র ইস্যু, মূলত: দুই গ্রামবাসীর মধ্যকার পূর্ববিরোধের জেরে এসব অপ্রতাশিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রাখা হয়েছে।

(ডিসি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২)