মাসুম শাহরিয়ার


দুইজন ব্যক্তির সিধান্তের মাধ্যমে পরিবার কে না জানিয়ে বিবাহ সম্পাদিত হলো। স্বামী তার স্ত্রী কে বাড়িতে আনলো সবাই কে জানানো হলো তারা কোর্ট ম্যারেজ করেছে। সবার মুখে মুখে অমুকের ছেলে তমুকের মেয়ের সাথে কোর্ট ম্যারাজ করেছে। আমাদের সমাজে এই চিত্র প্রায় আমরা দেখতে পাই। আমরা সাধারণত কোর্ট ম্যারেজ কে বিবাহ মনে করি। কোর্ট ম্যারেজ কোন বিবাহ না। এটি একটি হরফনামা মাত্র। আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধান নেই। এটি একটি লোকমুখে প্রচলিত শব্দ মাত্র। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন শুরুর আগে আমি নিজেও এই বিষয়ে অজ্ঞ ছিলাম। অন্য দশটা মানুষের মত আমিও এটি বিবাহ মনে করতাম। প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারেজ বলতে বোঝায় হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়া । এ হলফনামাটি ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক অথবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ উক্ত হরফনামার মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, প্রচলিত পারিবারিক আইন দ্বারা তারা বিবাহ সম্পন্ন করেছে।

বিবাহ সম্পাদিত করতে হলে অবশ্যই আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের জন্য যে সকল প্রচলিত পারিবারিক আইন রয়েছে সেটি মান্য করে বিবাহ সম্পাদন করতে হবে। যেমন:- মুসলিম আইন অনুয়ায়ী একজন ব্যক্তিকে বিবাহ সম্পাদন করতে হলে প্রথমে প্রস্তাব দিতে হবে এবং সম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহন করতে হবে। প্রস্তাব গ্রহনের পরে দেনমোহর নির্ধারণ, দুইজন পুরুষ সাক্ষী অথবা ১ জন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষী, একই বৈঠকে বিবাহ সম্পাদন, বিবাহের ভাষা সুস্পষ্ট, রেজিষ্ট্রেশন ইত্যাদি। একইভাবে হিন্দু আইন ও মান্য পারিবারিক আইন দ্বারা বিবাহ সম্পাদন করতে হবে। তাহলেই বিবাহ সম্পাদিত হবে। বিবাহের পরে উক্ত হরফনামা করে রাখা যেতে পারে।

তবে ভুল ধারণা থাকার ফলে অনেকে বিবাহ সম্পাদন না করে অথবা মুসলিমদের জন্য বিবাহের অপরিহার্য উপাদান রেজিষ্ট্রেশন না করে প্রচলিত অর্থে হরফনামা করে । এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই কাজীর মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদন ও হরফমামার সাথে তথ্য মিল রেখে নিবন্ধন করে ফেলতে হবে। হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধন অপরিহার্য না তবে চাইলে করতে পারে। মুসলিমরা যদি বিবাহ সম্পাদন বা রেজিস্ট্রেশন না করে থাকে তাহলে আইনগত জটিলতায় পড়তে হবে কারণ বিবাহ বহির্ভূত একত্রে বসবাস আমাদের দেশে যেমন স্বীকৃতি না। আবার বিবাহ সম্পাদন করেছে কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করেনি তাহলেও সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে কারণ বর্তমান আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় কাজি ও পাত্রের দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থী : ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।