মো: শান্ত, নারায়ণগঞ্জ : প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত জেলা নারায়ণগঞ্জ। ঘন বসতিপূর্ণ এ জেলায় প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালে প্রতিদিন-ই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে হাজার হাজার মুমূর্ষ রোগী ও স্বজন। সরকারি এই হাসপাতালকে ঘিরে শহর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো ঘরে উঠেছে নামে-বেনামে ডাইগোনেস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। পরীক্ষা বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন তারা। প্রতিনিয়তই নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেই পরিচালনা করছে ব্যবসা। দ্বায়িত্বরত চিকিৎসকদের মোটা অংকের কমিশন দিয়ে ভালো চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করছে ডাইগোনেস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।

শহরের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ঠ খানপুর জেনারেল হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ গেট সহ জরুরি বিভাগের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফাঁদ পেতে ঘুড়ো ঘুরি করছে দালালরা। জরুরি বিভাগ সব কয়টি ইউনিটের সামনে ফার্মাসিটিক্যালের প্রতিনিধিদের অবস্থান। এছাড়া এক দল দালালের অবস্থান তো ডাক্তারদের রুমের পাসে ও রুমেই। রোগী ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই স্লিপের ছবি তোলার জন্য ঘেড়ে ধরছে ফার্মাসিটিক্যালের প্রতিনিধিরা। এতে রোগীর স্বজন সংকোচ বোধঁ করলেও যেন তাদের কিছুই যায় আসে না। ডাক্তার যে পরীক্ষা করতে দেয় রুম থেকে বের হওয়ার আগেই দ্বায়িত্বরত নার্স ও ডাইগোনেস্টিকের দালালরা কাগজ হাতে ধরিয়ে দেয় ও তাদের নির্দিষ্ট সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর জন্য জোড় করে নিয়ে যায়। যারা দালালদের পছন্দ মতো সেন্টার থেকে পরীক্ষা না করাতে চায় তাদের এক প্রকার হুমকি দিয়ে বলে রির্পোট নিয়ে আইসেন দেখাবোনে। প্রতিনিয়তই দালাল মুক্ত করার লক্ষ্যে হাসপাতালে তত্বাবধায়কের নেত্বতে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। তবুও কেন যানি দালাল মুক্ত করা সম্ভবই হচ্ছে না বলছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

খানপুর হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে আশা মো: নুরুল আমিন বলেন, আমি কোভিডের টিকা দিতে আসছি। কিন্তু গেট দিয়ে প্রবেশ করা মাত্রই এক দালাল আমাকে বলে লাইনে না দারিয়েই সে আমাকে টিকা নিয়ে দিবে বিনিময়ে তাকে ২০০ টাকা দিতে হবে। এইরকম আরো অনেক দালাল আছে যারা ফাঁদ পেতে বসে থাকে ও সেবা নিতে আশা মানুষদের হয়রানি করে।

সেফালী নামের একজন রোগী ও তার স্বজন জানান, আমি এখানে সার্জারীর ডাক্তার দেখাতে আসছি। কিন্তু হাসপাতালে সেবা নিতে এসে আমি এক প্রকার হয়রানীর শিকার। ডাক্তার পরিক্ষা করতে বলছে তা আমার যেখানে সুবিধা সেখান থেকেই তো করাবো। এখানে ঠিক তার উল্টো নার্স আমাকে দালালের সাথে পাঠিয়ে বলে ওই দালাল নাকি আমাকে সব বুঝিয়ে দিবে এবং দালাল যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যেন আমি পরিক্ষা করাই। এছাড়া রুমের ভিতরে ডাক্তার ও নার্স বাদে দালাল রয়েছে দুই (২) জনের বেশি।

হাসপাতালে মা’ কে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আশা সাগর নামের এক রোগীর স্বজন জানান, আমার মাকে ডাক্তার দেখানোর পর বাহিরে আশা মাত্রই বিভিন্ন নামে-বেনামি ডাইগোনেস্টিক সেন্টারের দালালরা হাজির হয়েই একে একজন একে এক রকম অফার দিতে থাকে। দালালরা আমাকে বলে কম টাকায় পরিক্ষা করিয়ে দিবে। একজন তো ডাক্তারের রুম থেকেই আমার সাথে বের হয়েছে। সে তো তখন বলেই উঠলো যে তার সাথে গিয়ে পরিক্ষা না করালে নাকি ডাক্তার আমার রির্পোটই দেখবেই না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে যে সকল দালালরা থাকে তাদের বেশির ভাগই কমিশনে কাজ করে। যে যত বেশি রোগী পরিক্ষা করাতে পারবে সে তত বেশি কমিশন পাবে।

এ বিষয়ে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের চিকিৎসা তত্বাবধায়ক (উপ পরিচালক, স্বাস্থ্য) ডাঃ মো: আবুল বাসার বলেন, আমি একা একা দারিয়ে দেখি মসজিদের সামনে অনেক দালাল থাকে যখন আমাকে দেখে তখন সব দৌঁড়ে পালায়।

তিনি ভিতরে ও বাহিরে দালাল থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি প্রতিদিন বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করি আমার চোখেও পরেছে। এটার পদক্ষেপ আমার আছে। তাদেও মধ্যে যাদের চাকরি শেষ তাদেও মধ্যে কিছু লোক আছে এছাড়া ডাইগোনেস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দালাল ও ফার্মাসিটিক্যালের লোক। এ বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সহ বেশ কয়েক জায়গায় চিঠি দিয়েছি। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যে রেজাল্ট চলে আসবে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২)