তুষার বাবু, নেত্রকোণা : স্বাধীন বাংলাদেশের ডাকসু'র প্রথম ভিপি, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এনজিওতে 'চাকরি' করাকে গরিবের মুক্তির জন্য 'বিপ্লবী' কাজ মনে করা শুধু ভুলই নয়, তা ক্ষতিকর ও বিপজ্জনকও বটে।’

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নেত্রকোণার বিশিষ্ট বাম রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক মোস্তফা কামালের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উদীচী নেত্রকোণা জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সুশীল সমাজ ও সিভিল সোসাইটি প্রসঙ্গ শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির স্মারক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিপ্লবী বাক্যবাগীশতার রোমাঞ্চকর উত্তেজনা কিংবা মধ্যবিত্তসুলভ উৎকট প্রদর্শনবাদের লোভনীয় প্রলোভনকে জয় করে তরুণ সমাজকে আজ সমাজবিপ্লবের নীতিনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। চলতি হাওয়ার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যাবে না।

স্মারক বক্তৃতার প্রথমেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ' বলতে কি বোঝায়? কাদের নিয়ে তা গঠিত? তিনি বলেন, সুশীল সমাজের সংজ্ঞা নির্ধারণে 'অশীল' শব্দের বিপরীতে 'সুশীল' শব্দটির প্রয়োগের দ্বারা সমাজের 'বেসামরিক' অগণিত মানুষের মধ্যে শুধু শিক্ষিত, মার্জিত, কৌলিন্যসম্পন্ন, ভদ্রশ্রেণির মানুষ নিয়ে 'সুশীল সমাজ' গঠিত বলে বলার চেষ্টা করা হয়। এক সময়ে কলকাতার 'বাবু সমাজ' বলে যেভাবে সমাজের একাংশকে চিহ্নিত করা হতো অনেকটা তেমনই!

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, "দুদিন আগেই যাঁরা ছিলেন সচিব, উপদেষ্টা, জেনারেল, আইজিপি, 'কমরেড' ইত্যাদি, তাঁরাই এখন সুশীল সমাজভুক্ত হয়ে উঠতে পারলেন কোন জাদু-মন্ত্রবলে? সিভিল সোসাইটির পুঁজিবাদী তাত্ত্বিকেরা মানুষের মাঝে এমন ধারণা ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন যে, সিভিল সোসাইটি' হলো শ্রণি-বিভাজন নির্বিশেষ এবং শ্রেণি-দ্বন্ধের ঊর্ধ্বে অবস্থিত একটি পবিত্র, প্রশান্ত, আলোকিত সামাজিক সত্তা।

এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশে 'সুশীল সমাজ' কথাটির ব্যাবহারই শুধু বাড়েইনি,'সুশীল সমাজে'র বলে কথিতরা আজ বাংলাদেশের সমাজজীবনে একটি শক্তিশালী প্রায়োগিক বাস্তব উপাদান ও শক্তি হয়ে উঠেছে। জনাব সেলিমের মতে, সমাজ যেহেতু শোষক ও শোষিত হিসেবে বিভাজিত, তাই সেখানে 'শ্রেণিনিরপেক্ষ সুশীল সমাজ' বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না।

মার্কসবাদীরা কোন রকম সংষ্কার মানতে পারে না, এমন ধারণার বিরোধিতা করে তিনি দাবি করে বলেন, মার্কসবাদীরা সবসময় কিংবা সব রকম ‘সংস্কার বিরোধী'-এ কথা সঠিক নয়, তবে তারা 'সংষ্কারবাদে'র বিরোধী।

তিনি বলেন, এখনকার একটি বিশেষ কাজ হলো 'সুশীল সমাজ' নামে পরিচালিত বিকৃতিকে রুখে দাঁড়নো এবং তার পাশাপাশি 'সিভিল সোসাইটি' প্রকৃত মর্মবাণী পুনরুদ্ধার করা।

এসময় স্মারক বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোণার বিভিন্ন বিশিষ্টজনের পাশাপাশি ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে আগত সিপিবি ও উদীচীর অতিথিবৃন্দ ও অধ্যাপক মোস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যরা।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২)