চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ও স্বতন্ত্র থেকে অনেকেই নির্বাচন করবেন বলে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছেন সম্ভাব্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে, বিএনপি বা অন্যকোনো দলের প্রার্থীদের আগ্রহ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীদের মধ্যে কিছু নাম এরই মাঝে সামনে এসেছে। যাদের কর্মী-সমর্থকরা নিজ নিজ পছন্দের নেতাকে উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান বলে দাবি উত্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা ও আলোচনা শুরু করেছেন। তবে চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই ভোটার সমর্থকদের মাঝে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, আগামী ২রা নভেম্বর কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৬ অক্টোবর, বাছাই ১০ অক্টোবর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ১৭ অক্টোবর এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২ নভেম্বর।

উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি, শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বড়উঠানের ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ দিদারুল আলম, চরলক্ষ্যার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম তাঁরা।

ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-উপজেলা আ’লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জুলধা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আমির আহমেদ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মাদ আবদুল হালিম, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মহি উদ্দিন মুরাদ।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী-বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কর্ণফুলী উপজেলা মহিলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বানাজা বেগম, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মহিলা সদস্য মোমেনা আক্তার নয়ন, মহিলা আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রোকসানা বেগম জুছি প্রকাশ জুসি হোসাইন, শিকলবাহা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত আবুল কালাম বকুল এর কন্যা ডা. ফারহানা মমতাজ, বড়উঠানের সাবেক ছাত্রনেতা সাদেক শিকদারের সহধর্মিণী ব্যাংকার শারমিন আক্তার মনি উল্লেখযোগ্য।

এ উপজেলায় প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ হলেও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে গুটি কয়েক জনের। ক্লিন ইমেজের অধিকারী খোঁজা হলেও কয়েকজনকে এগিয়ে রাখা যাবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধারণা সেই দিক বিবেচনা করে এবার এ উপজেলায় নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে। না হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোটের মাঠে সুবিধা পেতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আবার অনেকেই আছেন সময় ও সুযোগ বুঝে ডিগবাজি দেবেন। চেয়ারম্যান পদ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে। আবার ভাইস থেকে চেয়ারম্যান পদে।

মোহাম্মদ নাঈম নামে এক তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের নীতি আদর্শ মেনে দলের জন্য যারা কাজ করেছেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমন প্রার্থীকে তৃণমূল চায়। না হয় ইভিএমে হোঁছট খেতে হবে।’ সম্ভাব্য প্রার্থীরা আড়ালে আবডালে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি সব দিক বিবেচনা করে দল মনোনয়ন দেবেন।’

রোববার স্যোশাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল হওয়া কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় একটি প্যাডে সভাপতি ফারুক চৌধুরী ও সম্পাদক মোঃ হায়দার আলীর স্বাক্ষরিত উপজেলা শাখার মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকায়-চেয়ারম্যান পদে ফারুক চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমির আহমদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোমেনা আক্তার নয়নের নাম প্রচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, ‘এটা কিভাবে ফাঁস হয়েছে জানি না। আজকে আমরা তালিকাটা পেলাম। তবে চেয়ারম্যান পদে শুধু নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। প্যাডে হয়তো ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সম্ভাব্য নাম উল্লেখ করেছেন। যা হলো দলের সুপারিশ।’

সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এক উপজেলা থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই প্রার্থী হবেন। আমাদের দায়িত্ব ঢাকায় তালিকা পাঠানো। তবে আমরা স্থানীয় মন্ত্রীর নির্দেশে একজনের নাম উপজেলা আ’লীগের রেজুলেশনসহ পাঠাবো।’

তথ্যমতে, কর্ণফুলী উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে। কর্ণফুলী উপজেলায় সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিলো ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের প্রস্তাবিত মোট ভোটকেন্দ্র ৪০টি। চরলক্ষ্যায় ৭টি, চরপাথারঘাটায় ৯টি, বড়উঠানে ১০টি, জুলধায় ৫টি ও শিকলবাহায় ৯টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। এতে মোট কক্ষসংখ্যা থাকবে ২৪২টি। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৩ হাজার ৫৯৯ জন ও মহিলা ভোটার ৫৪ হাজার ২০০ জন।

(জেজে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২)