মগড়া নদীর দূষণ এবং দখলরোধে নেত্রকোণায় আলোচনা সভা
তুষার বাবু, নেত্রকোণা : নেত্রকোণা শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত এককালের প্রমত্তা মগড়া নদীটি এখন দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে। কালের বিবর্তনে মগড়া আজ তার সব ঐতিহ্য হারিয়ে ক্ষীণখালে এবং মানুষের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এখানে নেই আগের সেই স্রোত। এখন চলছে নদীর তীর দখলের প্রতিযোগিতা।
আজ রবিবার 'নদী দিবসে' পরিবেশ আইনবীদ সমিতি 'বেলা' আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ প্রসঙ্গগুলো উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্মানিত জেলা প্রশাসক জনাব অঞ্জনা খান মজলিশ মহোদয়। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী সহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, কৃষিবিদ, সুধি সমাজ, জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকবৃন্দ ও বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও নেটওয়ার্ক মেম্বাররা।
মুক্ত আলোচনার এক পর্যায়ে মগড়া নদীর দূষণ ও দুরাবস্থার উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ও টেলিভিশন প্রতিবেদনে উঠে আসে বক্তব্যের সত্যতা। প্রায় ১১২ কি.মি. দীর্ঘ ও গড়ে ৭৭ মিটার প্রস্থের এই সর্পিলাকার নদী নেত্রকোণার মূল শহরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলাচল করে শহরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও দূষণ ও দখলের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। বেলার প্রতিবেদন অনুযায়ী মগড়ার দুই তীরে গড়ে উঠেছে ১৫৭টি অবৈধ স্থাপনা। মগড়া নদী রক্ষার দাবীতে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি। এই দূষণ ও দখলের ফলে মগড়া থেকে হারিয়ে গিয়েছে নানা ধরণের মাছ। হারিয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহী মহাশোল সহ শুশুক, কচ্ছপ সহ আরও অনেক প্রাণী।
নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন নদীতে। শিশুর এ ময়লা পানিতে নেমে গোসল ও খেলাধুলা করায় তাদের সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটেরপীড়া, চর্মরোগ সহ নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মগড়া নদী ও তার হারিয়ে যাওয়া নাব্যতা রক্ষায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বারসিক, জনউদ্যোগ, নদী বাঁচাও আন্দোলন নানা পদক্ষেপ পালন করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ সহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীর তীরে লংমার্চ, সভা-সমাবেশ, সেমিসার ও মগড়ার দূষণ রোধ কল্পে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র বরাবর চিঠি প্রদান, মানববন্ধন ইত্যাদি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে বহুবার।
এ সব তথ্যের আলোকে জেলা প্রশাসক মহোদয় জানান, ইতিপূর্বে মগড়ার দখল পুনরুদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হলেও বিভিন্ন আইনী জটিলতায় নদীর সম্পূর্ণ দখল উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণে 'সিএস' ও 'আরওআর' রেকর্ডমূলে সীমানা চিন্হিত করার রায় ঘোষণা হওয়ায় এখন সুধি সমাজ ও নাগরিকদের সম্মিলিত চেষ্টায় এ নদীকে পূর্বের রুপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মিডিয়া সহ সকল নাগরিকের সহযোগিতা পূর্ণ মনোভাব প্রত্যাশা করেন।
আব্দুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পরিবেশ আইনবীদ সমিতি 'বেলা'র পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমন্ময়কারী জনাব গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, ‘ইতিপূর্বে নেত্রকোণার মহাদেও ও সোমেশ্বরী নদীতে অবৈধ দখল ও বালু উত্তোলন নিয়ে বেলার করা মামলায় নদী দুটির ব্যাবস্থাপনায় তুলনামূলক উন্নতি ঘটলেও মগড়া নদী নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন মামলা করা হয়নি। তবে, জন সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক এ ধরণের কার্যক্রমেও কোন সামগ্রিক উন্নতি না ঘটলে বেলার পক্ষ হতে মগড়া নদী রক্ষার জন্যও ভবিষ্যতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২)