তুষার বাবু, নেত্রকোণা : নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার 'দুধি' গ্রামের ১১ বছরের শিশু মোঃ জুনায়েদ। তার পিতা মোঃ জুয়েল মিয়া একজন দরিদ্র অটোরিকশা চালক। কয়েকবছর আগে অন্য শিশুদের সাথে খেলার সময় দূর্ঘটনা বশতঃ একটি বাঁশের আঘাতে শিশু জুনায়েদের ডান চোখ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৃশ্যত কোটর থেকে বেরিয়ে আসা এই চোখের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় অটোরিকশা চালক বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা। 

প্রথমে কিছুদিন ময়মনসিংহের বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করলেও পরবর্তীতে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় জুনায়েদের চিকিৎসা। নিয়তির কাছে হার মেনে সেই কোটর থেকে বেরিয়ে থাকা চোখের তীব্র যন্ত্রণা আর সেইজন্য অনান্য শারিরীক সমস্যাকেই নিত্যদিনের সঙ্গী করে বছরের পর বছর চলে যাচ্ছিল দারিদ্রপীড়িত জুনায়েদের জীবন। দিন দিন চোখের সাথে সাথে কপাল সহ মুখমন্ডলের একাংশ ফুলে উঠতে থাকে আর সেই সাথে বাড়তে থাকে জুনায়েদের যন্ত্রণা। ঘটনাক্রমে জেলার সাংবাদিক জনাব রাজীব সরকারের দৃষ্টিগোচরে আসে শিশু জুনায়েদের এই অসহায়ত্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুনায়েদকে সহ সেই মর্মস্পর্শী ঘটনা তুলে ধরেন তিনি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হবার পর তা সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব অঞ্জনা খান মজলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তথ্য অনুসন্ধান করে জুনায়েদকে তার অভিভাবক সহ তিনি তাঁর কার্যালয়ে আসার আহ্বান জানান। অতঃপর যেন পুনরায় আশার আলো দেখতে পায় জুনায়েদ ও তার পরিবার। তার তাৎক্ষণিক নির্দেশে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে জুনায়েদের চিকিৎসা বাবদ নগদ ১০ হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, অতিদ্রুত সুচিকিৎসার জন্য জুনায়েদকে তার অভিভাবক সহ ঢাকার বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং এ সংক্রান্ত ব্যাবস্থা গ্রহনে জেলার সমাজেসবা অধিদপ্তরকে এক মৌখিক নির্দেশে শিশু জুনায়েদের চিকিৎসাভার গ্রহণ করতে আহ্বান জানানো হয়৷

আশার আলো দেখছে ছোট্ট জুনায়েদ ও দারিদ্র্যের শিকার তার অসহায় পরিবার। আশার আলো দেখছে নেত্রকোণার সুনাগরিক সমাজ। কোমলপ্রাণ ও মানবিকতার যে বিশুদ্ধ চর্চা নেত্রকোণার জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক জনাব অঞ্জনা খান মজলিশ মহোদয় প্রতিষ্ঠা করছেন, তার সুবাতাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসহায় মানুষের জন্য হবে এক নতুন জীবনের নতুন আশার সঞ্চালক।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২)