স্টাফ রিপোর্টার : সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই শেয়ার বাজারে দরপতন হলো।

শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যে দরপতন হচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কয়েকদিনের টানা উত্থানের কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ বেড়ে গেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদনের প্রথম দুই ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে।

তবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর লেনদেন অংশ নেওয়া বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। এ দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে দিনের লেনদেন শেষ একদিকে দাম কমার পাল্লা বড় হয়, অন্যদিকে পতন হয় সবকটি মূল্যসূচকের।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৬টির। আর ১৭৪টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৮৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে নয় কার্যদিবস পর ডিএসইর প্রধান সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নামলো।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ারবাজারের এ দরপতন সম্পর্কে বিনিয়োগকারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বাজার ভালো দেখে নতুন করে কিছু টাকা ঢুকিয়ে ছিলাম। একটি কোম্পানির শেয়ার দাম কয়েকদিন ধরে বাড়ছিল। যে কারণে কোম্পানিটর শেয়ার কিনেছি। কিন্তু আমি কেনার পর থেকেই দাম কমছে। এছাড়া আগে যেসব শেয়ার কেনা আছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ফ্লোরে আটকে আছে। কবে এসব শেয়ার বিক্রি করতে পারবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে একটু আতঙ্কে আছি। এ বাজার থেকে মুনাফা করা মুশকিল হয়ে গেছে। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। এটা ভালো বাজারের লক্ষণ না।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ দরপতনের আগে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল বেশ কয়েকদিন। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ প্রফিট টেকিং করছেন। আর প্রফিট টেকিংয়ের সময় কিছুটা মূল্য সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, আমাদের বাজারে মূল সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীরা যুক্তিসংগত আচরণ করেন না। এ বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। আবার এ বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই পার্টি (সংঘবদ্ধ চক্র) আছে এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এতে কিছু বিনিয়োগকারী মুনাফা করতে পারলেও বেশিরভাগ লোকসান করে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজারের গতি প্রকৃতি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, এ বাজার কিছু চক্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বাজারে লেনদেন হচ্ছে গুটি কয়েক কোম্পানির শেয়ার। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার তেমন লেনদেন নেই। এটা বাজারের ভালো লক্ষণ না। বিনিয়োগকারীদের উচিত সিন্ডিকেটের পেছনে না দৌড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ভালো লভ্যাংশ দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা।

এদিকে সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৩০০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ১১৯ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইস্টার্ন হাউজিং, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিডিকম অনলাইন, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, ইউনিক হোটেল, শাহিনপুকুর সিরামিক এবং এডিএন টেলিকম।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৪টির এবং ৯৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২)