মোহাম্মদ সজীব, ঢাকা : আওয়ামী লীগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তবে বেআইনি ঘোষণা করছে না। আবার আওয়ামী লীগ ও জামায়াত উর্দু শব্দ। দুই দলের মধ্যে পরকীয়া চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। গতকাল সোমবার হাজারীবাগ বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করা হবে।

এর আগে রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশস্থলে যুবলীগের পাল্টা কর্মসূচি ডাকাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। গতকাল সোমবার ওই সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং দল দুটির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্য এক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুপক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন।

এদিকে হাজারীবাগে সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন ওই দুই সাংবাদিক। বিষয়টি জানার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দলের চার নেতাকর্মীকে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার ১৬টি জায়গায় সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকালের সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। প্রথমে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ডে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে সমাবেশের অনুমতি পায়নি। পরে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে অনুমতি দেয়। কিন্তু গত রবিবার রাতে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে বিএনপির সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে যুবলীগ কর্মসূচির ডাক দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সংঘর্ষের আশঙ্কা ও জানমালের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে উভয় সংগঠনকে সমাবেশ করতে নিষেধ করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। অবশ্য পরে গতকাল সকালে বিএনপিকে হাজারীবাগে সিকদার মেডিকেল কলেজের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের লাগবাগ, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি থানা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাঁশ ও লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরাও লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশমুখী হয়। চারটি থানার নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। তাদের হাতে লাঠি ও জাতীয় পতাকা ছিল। নেতাকর্মীদের হাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা গেছে। তবে মঞ্চে অসীমের ছবি ছিল না। সেখানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবির ছবি দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ২টার দিকে লাঠি নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাজারীবাগের টালি অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে না গিয়ে উল্টো তাদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেখানে কয়েক মিনিট ধরে চলা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় দুই দলের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর টালি অফিস রোডের মোড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা লাঠি হাতে অবস্থান নিলেও পরে আর কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের ধানমন্ডিঅঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার এহসানুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি। তবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লাঠির দরকার নেই। লাঠি থাকলে শান্তি বিনষ্ট হতে পারে। সে জন্য আমরা সমাবেশে আসা লোকজনকে লাঠি সরিয়ে ফেলতে বলেছি।’

হাজারীবাগে গতকালের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে ওই দুই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানার পর বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেন।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সভাপতিত্বে এবং কে এম জোবায়ের এজাজ ও আরিফা সুলতানা রুমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২)