সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : বিতর্কিত কর্মকান্ডের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করা হয় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তালিমা আকতারকে। প্রত্যাহারের পর ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও সালথার কর্মস্থলেই রয়েছেন তিনি। তারপর মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টম্বর) দুপুরে উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের মাঠিয়াদী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ধারনা করে একটি বন্ধ থাকা ড্রেজার মেশিনের পাইপ ভেঙ্গে আবারও বিতর্কে জড়ান ইউএনও। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই ড্রেজার মেশিনটি নদী থেকে কোনো বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল না। গত তিন-চার দিন আগে আড়িয়াল খা থেকে ভরাট বালু কিনে বলগেট জাহাজে করে আনেন ব্যবসায়ীরা। পরে বলগেট জাহাজের ভিতরে পাইপ বসিয়ে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে একটি পুকুর ভরাট করেন তারা। এরপর বলগেট জাহাজটি সেখান থেকে সরিয়ে নিলেও ড্রেজার মেশিনটি বন্ধ অবস্থায় নদীর পাশে ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ ইউএনও এসে সেই বন্ধ ড্রেজারের পাইপ ভেঙ্গে ফেলে।

বালু ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা আড়িয়াল খা থেকে বলগেট জাহাজে করে বালু কিনে এনে গ্রামে বিক্রি করি। আমরা তো নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করি নাই। তারপরেও ইউএনও এসে আমার ড্রেজারের পাইপগুলো ভেঙ্গে ফেলেছে। আমাদের উপর অন্যায় করা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ ব্যবসা-বানিজ্যও করার সুযোগ নেই।

বালু ভরাট করা পুকুরের মালিক জহুর মোল্যা বলেন, আমরা আড়িয়াল খা থেকে বালু কিনে বলগেট জাহাজে করে এনে পুকুর ভরাট করেছি। ইউএনও এসে আমাদের কোনো কথা না শুনে ড্রেজার মেশিনের পাইপ ভেঙ্গে ফেলে। আমরা তো নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করিনি। তাহলে কেন ড্রেজার ভাঙ্গা হলো।

এব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাছলিমা আকতার বলেন, ভাওয়াল নদীতে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিছু লোক। খবর পেয়ে আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজারে পাইপ খুলে ফেলা হয়। কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়নি।

বলগেট জাহাজ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন বলগেট জাহাজ পাওয়া যায়নি। বলগেটের কোন প্রমাণও নাই। যারা বলগেটের কথা বলেছে, তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। এছাড়াও বলগেট জাহাজ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু নামালে আমাদেরকে অবহিত করা উচিত।

এরআগে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পর ইউএনও তাছলিমা আকতারকে প্রত্যাহার করা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম মাহফুজুর রহমান সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাছলিমাকে প্রত্যাহার করে তাঁর চাকরি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তাঁকে ঢাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রে হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

তখন তাছলিমার প্রত্যাহারের খবরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সাধারন লোকজন উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছিল। মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে।

তাছলিমা আকতার ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর সালথার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন। এক বছর পার হওয়ার আগেই তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। গত এক বছরে তিনি বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী মো. শাহেদ চৌধুরীকে দিয়ে প্রধানন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করায় তিনি বেশি বিতর্কে জড়ান। ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগও উঠে। তাছাড়াও নিজের বাসার কাজের নারী ও অফিস সহকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও ওঠে। তিনি উপজেলা পরিষদ ভবনে ছাগল পালন করেও নানা বিতর্ক সৃষ্ট করেন।

(এএনএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২)