স্টাফ রিপোর্টার : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তথ্য অধিকার বাস্তবায়নের জন্য হুমকি। এ আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলে তথ্য অধিকার আইনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০২২ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তথ্য অধিকার আইন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন অভিমত দেন।

তারা বলেন, অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় তথ্য না দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে তথ্য গোপনের প্রবণতা বন্ধ হতে পারে।

ওয়েবিনারে তথ্য কমিশনের গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, সংবিধানের ৭ এবং ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদ তথ্য অধিকার আইনকে প্রকৃত অর্থেই জনগণের আইনে পরিণত করেছে। তথ্য কমিশন জনগণের জানার অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও তথ্যপ্রাপ্তির সুবিধা নিশ্চিত করতে কমিশন বর্তমানে সরকারে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সঙ্গে কাজ করছে।

প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সরকারের এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জনগণের জানার যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি তথ্য অধিকার আইনে আপিল আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান।

দ্য কার্টার সেন্টার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা রুকসানা আফরোজ বলেন, আমাদের সমাজে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সাধারণত তথ্যপ্রাপ্তিতে বঞ্চিত থাকেন। এটি আরও বেশি সত্য নারীদের ক্ষেত্রে। দারিদ্র্য ও স্বল্পশিক্ষা নারীদের মধ্যেই বেশি এবং নারীরা দুর্নীতিরও অন্যতম ভুক্তভোগী। তথ্য অধিকার আইন এ সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণে নারীদের জন্য একটি উপায় হিসেবে কাজ করতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে তথ্য কমিশন একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রতি কমিশন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে চাওয়া তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহের আদেশ দেয়। এ ধরনের রায় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের বিষয়ে উৎসাহিত করে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও তথ্য অধিকারকর্মীরা স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা, দেশের আট বিভাগে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করা তথ্য ও মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০২২ এর জাতীয় প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক’।

অনুষ্ঠানে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মরিয়ম শেলী।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২)