মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা দরজায় কড়া নাড়ছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও শেষ। টাঙ্গাইলে প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন এ কটা দিন। আয়োজকদের মণ্ডপে মণ্ডপে সাজসজ্জার কাজও প্রায় শেষ। আগামী ১ অক্টোবর শনিবার ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর বুধবার বিজয় দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় ১ হাজার ২৬২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। সদর উপজেলার পূজামণ্ডপে ২০৯টি, বাসাইলে ৬৩টি, সখিপুরে ৪৪ টি, মির্জাপুরে ২৫৫টি, নাগরপুরে ১৩৪ টি, দেলদুয়ারে ১২৬টি, গোপালপুরে ৪৯টি, ভূঞাপুরে ৩৭টি, কালিহাতীতে ১৮৮টি, ঘাটাইলে ৭৫টি, মধুপুরে ৪৯টি ও ধনবাড়ীতে ৩৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। তবে জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী এবার ১৩০২টি মণ্ডপে দুর্গপূজা হবে। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ১২৪০টি।

জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীরা প্রতিমার গায়ে রং তুলির আচড় এবং অলংকরণ করে ফুটিয়ে তুলছেন দেবীর সৌন্দর্য। যেন জীবন্ত রূপে ফুটে উঠছে প্রতিমাগুলো। অনেকেই দেবী দুর্গার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। পূজার আগেই প্রতিমা দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন মণ্ডপগুলোতে। আবার কেউ কেউ শাড়ি কাপড় ও গহনা দিয়ে সাজসজ্জায় ব্যস্ত । আয়োজকরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পেরেছেন সঠিক সময়েই। জেলার বড়কালীবাড়ী, আদালতপাড়া, করটিয়া, পাথরাইল, এলেঙ্গা, মির্জাপুর এবং মধুপুরে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হয়ে থাকে।

উত্তর টাঙ্গাইলের একটি জাকজমকপূর্ণ বারোয়ারি দুর্গাপূজা হয়ে থাকে কালিহাতী উপজেলার দৌলতপুর রায় বাড়িতে। এখানে প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রতিমা তৈরি করছেন সনাতন পাল (৬০)। তিনি বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি আমাদের পৈত্রিক পেশা। আমরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। এটা আমাদের ঐতিহ্য।

তিনি আরো বলেন, আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্নস্থানে প্রতিমা বানাই। আমরা টিম আকারে কাজ করি। মোহন পাল বলেন, আমরা এ বছর ১ টি প্রতিমা তৈরি করেছি। পূজা শুরুর দেড় দুই মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করি। রাতে দিন সমান তালে কাজ করতে হয়েছে। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সব কিছুর দাম আগের তুলানায় অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষে না। জাতিগত কাজ এজন্য করতে হয়।

পাল সম্প্রদায়ের স্ত্রীরা পরিবারের কাজ কর্ম করে যে সময় টুকু সময় পান, স্বামীর সাথে প্রতিমা তৈরি কাজে সাহায্য করেন। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা রাত দিন জেগে কাজ করেছি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ ছিলো না। খাওয়া দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।

একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এ ছাড়া কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় পাঁচ শ টাকা থেকে ছয় শ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেক ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন।

টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে বলেন, এ বছর জেলায় ২২টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে। আমরা প্রশাসন ও পুলিশের সাথে একাধিকবার মিটিং করেছি। আশা করছি অত্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে এ বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ হবে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় মতো পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে পুলিশ থাকবে। জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে নামাজের সময় সূচি টাঙানো জন্য বলা হয়েছে। মণ্ডপগুলো পূজা চলাকালীন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২)