আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ বছরও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন অ্যালেইন অ্যাস্পেক্ট, জন এফ. ক্লজার এবং অ্যান্টন জেলিঙ্গার। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায় স্টকহোমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।

‘বিজড়িত ফোটন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেল অসমতার লঙ্ঘন প্রতিষ্ঠা এবং কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য’ ২০২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যাস্পেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ক্লজার এবং অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী জেলিঙ্গারকে।

নোবেল কমিটি জানিয়েছে, পুরস্কার বিজয়ীরা বিজড়িত কোয়ান্টাম অবস্থা ব্যবহার করে যুগান্তকারী পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন, যেখানে দুটি কণা আলাদা হওয়ার পরেও অভিন্ন এককের মতো আচরণ করে। এই ফলাফল কোয়ান্টাম তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন প্রযুক্তির দুয়ার খুলে দিয়েছে।

এর আগে, গত বছরও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনজন। তারা হলেন জাপানি আবহাওয়াবিদ স্যুকুরো মানাবে, জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমান এবং ইতালিয়ান পদার্থবিদ জর্জিও পারিসি। বৈশ্বিক উষ্ণতার পূর্বাভাস প্রদান এবং কমপ্লেক্স ফিজিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার বিষয়ে যুগান্তকারী অবদানের জন্য তারা এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

পৃথিবীর জলবায়ু পরিস্থিতির ফিজিক্যাল বা ভৌত মডেল তৈরি, পরবর্তনশীলতা পরিমাপ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি অনুমানের জন্য পদার্থে নোবেল জেতেন স্যুকুরো মানাবে এবং ক্লাউস হাসেলমান। অন্যদিকে, পারমাণবিক ও গ্রহীয় পরিসরে ভৌত ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল সিস্টেমের বিশৃঙখলা ও ফ্লাকচুয়েশন পরষ্পরের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা আবিষ্কারের জন্য পুরস্কার পান জর্জিও পারিসি।

গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথমদিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেলজয়ীর নাম। এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সুভান্তে প্যাবো। আদিম মানুষের জিনোম উদঘাটন ও মানব বিবর্তনের জিনোম সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

এরপর ধারাবাহিকভাবে মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য ও শুক্রবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর দুদিন বিরতি দিয়ে সবশেষ ক্যাটাগরি হিসেবে অর্থনীতিতে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার (১০ অক্টোবর)।

নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন
সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেময় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সফল, অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। যদিও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।

প্রত্যেক পুরস্কারের জন্য সনদ ও সোনার মেডেলসহ এক কোটি ক্রোনা বা নয় লাখ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। ১৯০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬০৯বার এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

কারা আগেই জানেন বিজয়ীদের নাম?
শুধু বিচারকরাই জানেন কারা পেতে যাচ্ছেন নোবেল পুরস্কার। পুরস্কার ঘোষণার আগে অন্য কারো পক্ষে বিজয়ীদের নাম জানা কোনোভাবে সম্ভব হয় না। এমনকি বিজয়ীদের নাম ঘোষণার আগে ইঙ্গিত দেওয়া থেকেও বিরত থাকেন বিচারকরা। তবে এ বিষয়ে কিছু জল্পনা থাকে সব সময়।

কে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে?
বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইন প্রণেতা, আগের নোবেল বিজয়ীও। তাছাড়া কমিটির সদস্যরাও আবেদন করতে পারেন। যদিও ৫০ বছরের আগে এসব মনোনয়নের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয় না।

কোথা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়?
শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ০৫, ২০২২)