অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : গায়ে গায়ে লেগে থাকা ইজিবাইকের জন্য ফুটপাতবিহীন সড়কে হাঁটা-চলা করাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরে এখন যানজট দেখা দিচ্ছে। প্রাইভেটকার নিয়ে শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ইজিবাইকের অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া ও যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অথচ এসব দেখার কেউ নেই। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শহরের পবহাটি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী বাবলু কুণ্ডু।

হামদহ এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা তুষার আহমেদ বলেন, এক সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হয়ে উঠেছিল শহরবাসীর চলাচলের নির্ভরযোগ্য বাহন। কিন্তু দিন যতো গড়িয়েছে বেড়েছে অটোরিকশার সংখ্যা। প্রতিদিনই সড়কে নামছে নতুন নতুন ইজিবাইক। এতে শহরবাসীর চলাচলের প্রধান সড়কগুলোতে লেগে থাকছে যানজট। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে শহররবাসীর। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর প্রবেশমুখের অর্ধেক অংশ দখল করে যাত্রী উঠা-নামা করে ইজিবাইক চালকরা। ফলে এসব স্থান দিয়ে পথচারীসহ অন্য যানবাহন চলাচল চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, বিষফোঁড়া নামে পরিচিত ইজিবাইক আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে শহরে। প্রতিদিনই এ ইজিবাইকের আঘাতে কোনো না কোনো স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, ইজিবাইক চালকদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ট্রাফিক পুলিশ এদের নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আর এ ব্যর্থতার কারণে গোটা শহর যেন গ্রাস করে ফেলেছে এ ইজিবাইক। সঙ্গে যোগ হয়েছে ইঞ্জিনচালিত রিকশা। ফলে শহরময় যানজট স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। প্রশাসন ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত এসব ভ্যানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবারো সড়কে ফিরে আসে অবৈধ এসব যানবাহন।

অভিযোগ রয়েছে, শহরে ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে ঝিনাইদহ পৌরসভা কতৃপক্ষ পদক্ষেপ নিলেও ধীর গতিতে চলছে অগ্রগতি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলের কারণে শহরের পায়রা চত্ত্বর,মুজিব চত্ত্বর,বঙ্গবন্ধু সড়ক,শেরেবাংলা সড়ক, এইচএসএস সড়ক থেকে পায়রা চত্ত্বর মোড় পর্যন্ত প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে।

সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, শহরের অধিকাংশ ইজিবাইকেরই চলাচলের জন্য বৈধ কোনো অনুমতিপত্র নেই। চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। এমনকি চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। ফলে এসব চালকদের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক সমাজের বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, সড়কে চলাচল করা এখন দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল। ঝিনাইদহে ইজিবাইকের সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে শুধু সড়ক পার হওয়া নয়, ইজিবাইকের আধিক্যে রীতিমতো আতঙ্কিত সবাই। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এক সময়ের জনপ্রিয় যানটিই এখন শহরবাসীর কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দিনই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

এদিকে ঝিনাইদহ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সড়কে শৃঙ্খলা পেরাতে আগামী মাসে থেকে দেওয়া হবে ইজিবাইকের নতুন লাইসেন্স। ইজিবাইক চালকদের দুইটি শিফট ভাগ করে দেওয়া হবে।সে অনুযায়ী তারা শহরে ইজিবাইক চালাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের ট্রাফিক পরিদর্শক মশিউর রহমান বলেন, বলেন, আমরা প্রায়ই অভিযান চালনা করি। তবে ইজিবাইকের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। নাগরিকদেও সচেতন হতে হবে।

(একে/এএস/অক্টোবর ১২, ২০২২)