আবীর আহাদ


বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত। এরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। গণবিরোধীও বটে। এরা প্রজাতন্ত্রের চাকর হলেও, এরা নিজেদেরকে দেশের প্রভু ভাবে। ভাবখানা দেখায় যে, তারা সবজান্তা। অথচ এদের অনেকেই বাংলা ভাষায় একটা বাক্যও সঠিকভাবে লিখতে পারে না! এদেরকে মেধাবী ভাবা হলেও এরা আসলে দুর্নীতির জন্য  মেধাবী। যোগ্যতা ও দক্ষতা বলতে এদের তেমন কিছু নেই। তবে এরা খেক শেয়ালের মতো ধূর্ত। আবার চরম ভীরু! সুবিধাবাদী ও পদলেহী। নপুংসক। দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও দুর্বৃত্তপরায়ণ রাজনীতিকরাই নিজেদের দুর্বলতার নিরিখে এই আমলাতন্ত্রকে অত্যন্ত মেধাবী ও শক্তিশালী মনে করে সমীহ করে থাকে।

লুটেরা-দুর্বৃত্তপরায়ণ রাজনীতিকরা যখন মন্ত্রী-এমপি হয়ে গদিতে বসে চুরিচামারির ধান্দা খোঁজে, সেই স্তরে এ আমলাতন্ত্র তাদের পাশে এসে পদলেহনের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের সুনজরে পড়ে যায়। শুরু হয় একে অপরকে সহযোগিতা প্রদানের নামে লুটপাটের ভাগাভাগির খেলা। একে-অপরের পারস্পরিক স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনস্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কেনাকাটার ভেতরে আকাশছোঁয়া অস্বাভাবিক বর্ধিত মূল্য দেখিয়ে তারা শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে থাকে। এরাই মিলেমিশে বিভিন্ন প্রকল্প ও কেনাকাটার উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন ঘটান, যার ফলে কাউকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে যারা এদেশ থেকে অর্থ পাচার করে, তাদের সিংহভাগই হলো আমলা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

মূলত: দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজনৈতিক সরকারের দুর্বলতার সুযোগে আমলাতন্ত্র তাদের ওপর জেকে বসে। এদের আরেকটি আদর্শগত দিক হচ্ছে তারা ব্যক্তিস্বার্থ প্রেমিক, কিন্তু দেশপ্রেমিক নয়। এজন্যই দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্র ও লুটেরা রাজনীতিকরা একে অপরের স্বার্থের পরিপূরক শক্তি।

এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা আমলা-রাজনৈতিক শক্তি লাঠিকে ভীষণ ভয় করে। বঙ্গবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং কাঙ্ক্ষিত সুখীসমৃদ্ধশীল গণমানুষের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সর্বাগ্রে এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা আমলাতন্ত্র ও দুর্বৃত্তপরায়ণ রাজনৈতিক শক্তিকে জবরদস্তিমূলক তাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এসব দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিকদের সরিয়ে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সৎ মেধাবী ও ত্যাগীদের প্রশাসনে ও রাজনীতিতে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চলবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। আর দেরি করার সময় নেই। এক্ষণি দুর্নীতিবাজদের মূলোৎপাটনের উপযুক্ত সময়।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার সংসদ।