অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ নির্বাচনেও হেরে গেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এর আগে সদর পৌরসভা, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দল বেঁধে হেরেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। অথচ এসব নির্বাচনের কোনোটিতেই অংশ নেয়নি বিএনপি। এতে একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে দলীয় মনোনয়ন ও নেতাকর্মীদের ঐক্য নিয়ে, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নেতাদের কোন্দলের বিষয়টিও চলে এসেছে সামনে। একের পর এক দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য এরা এখন দায়ী করছেন একে অপরকে। জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ার বিষয়টিও সামনে আনছেন অনেকে।

গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় কনক কান্তি দাসকে। আগের নির্বাচনেও তাকেই দেওয়া হয়েছিল মনোনয়ন। সে সময় জয়ী হন তিনি। এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নামেন সৃজনী এনিজওর পরিচালক এম হারুন অর রশিদ।

শুরুর দিকে প্রার্থী হিসাবে তেমন গুরুত্ব না পাওয়া সেই হারুন-ই শেষ পর্যন্ত করেন বাজিমাত। মাত্র পনের ভোটের ব্যবধানে কনককে হারিয়ে দেন তিনি। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলের ক্লীন ইমেজের প্রার্থী বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল। বিপুল ভোটে জিতে হিজল যে সংকেত দিয়েছিলেন তার ধারাবাহিকতাই যেন জেলা পরিষদেও প্রতিফলিত হলো।

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টি ইউনিয়নের দখল নেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এবং স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলসহ নানা কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার ঘটনা ঘটে।

মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, এখানে দলের বর্তমান সংসদ-সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মনোনয়ন ধরে রাখা আর ফিরে পাওয়া নিয়ে এই দুজনের ধারায় বিভক্ত আওয়ামী লীগ। চলে একে অপরকে ছোট করার লড়াই। কোনো এক প্রার্থীকে একজন সমর্থন দিলে অন্যজন চলে যায় বিপক্ষে। এই নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই পরাজিত হয় দলীয় প্রার্থীরা।

সংসদীয় আসন ও উপজেলাভিত্তিক দ্বন্দ্ব-কোন্দলের পাশাপাশি বিপর্যয়ের জন্য জেলা নেতাদের বিভক্তিকেও দায়ী করছেন অনেকে। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়না। সেই সাথে সহযোগী সংগঠনগুলোর কোথাও পূর্নাঙ্গ কমিটি নেই। যার ফলে গ্রুপিং ও দলীয় কোন্দল বাড়ছে। একের পর এক ঘটছে বড় ধরনের সহিংসতা।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী, দলের বেশ কয়েকজন নেতা তাদের প্রভাব ধরে রাখতে গিয়ে দলে গণতন্ত্রের চর্চা নষ্ট করছে। নিজস্ব বলয়ের বাইরে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে দেওয়া হচ্ছে বাধা। ফলে একদিকে যেমন তৈরি হচ্ছে বন্ধ্যত্ব, তেমনি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দলীয় মনোনয়নের সময় অনেক জায়গায় অযোগ্যরা অর্থের বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিল। আবার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে গোপনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন বেশকিছু শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সংসদ সদস্যরা। মূলত এজন্যই জেলার অধিকাংশ জায়গায় দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি এবং এরকম অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অনেকেই পরাজিত হয়েছে। আবার বেশকিছু জায়গায় বিদ্রোহীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গোপনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কাজ করেছেন।

একের পর এক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিক বার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

(একে/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২২)