প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮টি রেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। এসব রেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন ও জনসাধারণ। ফলে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে  প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।  এসব রেলক্রসিংয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটারও আশংকা করছে এলাকাবাসীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজারহাট উপজেলায় প্রায় ১৫কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। লালমনিরহাটের তিস্তা থেকে রাজারহাট হয়ে কুড়িগ্রাম-রমনা পর্যন্ত রেল সড়কে কুড়িগ্রাম এক্্রপ্রেস, শাটল এবং কমিউটার মোট ৩টি ট্রেন প্রতিদিন ৬বার যাওয়া আসা করে। এই রেল পথেই অনুমোদিত ৬টি ও অনুনমোদিত (অনুমোদনহীন) ৬টি সহ মোট ১২টি রেল ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার রাজারহাট-কুড়িগ্রাম রোডের টি-১৬ জে ব্যস্ততম রেলগেটটিতে একাধিক গেটম্যান থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ১জন গেটম্যান। রাজারহাট হাসপাতাল রোডস্থ রাজারহাট-সেলিম নগর রেল ক্রসিং (টি/১৫/জে) এবং মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন (টি-১৪জে) রেলগেট ২টিতে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান থাকার ঘর থাকলেও কোন গেটম্যান নেই। অন্যদিকে উপজেলার সিংগারডারড়ীহাট-বড়বাড়ি রোডস্থ রেলগেট এবং ভীমশর্মা ও চায়না বাজার (ইঞ্জিনিয়ারিং) রেলগেট ৩টিতে গেটম্যান থাকলেও অনুমোদনহীন আরো ৬টি রেল ক্রসিংয়ে কোন ব্যারিয়ার বা গেটম্যান নেই। সেগুলো হচ্ছে, মন্ডলের বাজার, সুন্দরগ্রাম পুটিকাটা, সিরাজ উদ্দিন এতিমখানা, উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন,রাজারহাট কারিগরি বাণিজ্যিক কলেজ সংলগ্ন রেলক্রসিং এবং দিনোবাজার।

এলাকাবাসী জানান, রাজারহাট-সেলিম নগর এবং মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রেলগেট ২টির উপর দিয়ে প্রতিদিন শতশত যানবাহন ও পথচারী চলাচল করে। এছাড়া রেল সড়কের ২দিকের বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন হাটবাজার ও অফিস প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। একই ভাবে রেল ক্রসিং ২টির উপর দিয়ে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মীরইসমাইল হোসেন কলেজ, রাজারহাট মডেল মহিলা বিএম ও কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ, রাজারহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাজারহাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। অথচ রেল বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ এই রেল ক্রসিং ২টিতে কোন গেঁটম্যান নিযুক্ত করেননি। সম্প্রতি রাজারহাট হাসপাতাল রোডস্থ রাজারহাট-সেলিম নগর রেল ক্রসিংয় ট্রেনের ধাক্কায় একটি অটোরিকসা দুমরে-মুসরে যায়। প্রায়ই ছোট-খাট দূর্ঘটনা ঘটে এই রেলগেটটিতে।

এভাবে উপজেলার অনুমোদিত-অননুমোদিত ১২টি রেলগেটের মধ্যে ৮টিই সম্পূর্ণরুপে অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় জনসাধারন ও যানবাহন পারাপার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এই রেলগেট গুলোতে গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরকারি রাজারহাট মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব সফিকুল ইসলাম রানা বলেন, যেসব রেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেগুলোতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষের দ্রুত গেটম্যান নিয়োগ দেয়া উচিত।

রবিবার (২৩ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম জেলা রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জানান, বিভাগীয় পরিবহন তত্ত্বাবধায়ক ও বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের নিকট আমরা একাধিকবার গেটম্যান নিয়োগের দাবিতে আবেদন করলেও কোন লাভ হয়নি।

রাজারহাট রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মাইদুল ইসলাম বলেন, যেসব রেলগেটে গেটম্যান নেই তা অবগত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট গেটম্যান নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

(পিএমএস/এএস/অক্টোবর ২৩, ২০২২)