রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সামসুদ্দিন আহমেদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তাঁর অপসারণ চেয়েছেন শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে তাঁরা শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের দেওয়া ১০ দফা দাবিরও দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এএইচএম মাহবুবুর রহমান। তিনি অভিযোগে বলেন, ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ও সমাধানের দাবিতে উপাচার্য বরাবর ১০ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কিন্তু সেইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন না। গত রবিবার বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে শিক্ষকবৃন্দের দীর্ঘ চার ঘন্টা আলোচনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দাবিগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। অধিকন্তু উপাচার্যের ভাষ্যমতে, শিক্ষকবৃন্দের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মবিরতিতে তার কিছুই আসে যায় না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচলাবস্থার মধ্যেও তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো শিক্ষার্থী আর শিক্ষকবৃন্দ। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণার কাজেই মগ্ন থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় এসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দ্বারা আলোকিত হন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, জাতির পিতার সহধর্মিনীর নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রকম প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ শিক্ষক ও শিক্ষর্থীদের নানাভাবে উপক্ষো করা হচ্ছে। উপাচার্যের নির্দেশে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে যেমন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি, চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে, বিধিবহির্ভূতভাবে রাজশাহীতে অবস্থানরত উপাচার্যের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বরাদ্দ করায় অর্থ ও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। তাছাড়া প্রাধিকাভুক্ত না হলেও অনেক কর্মকর্তা মাসিক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ভাড়াকৃত গাড়ি ব্যবহার করছেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লক্ষাধিক টাকায় ভাড়াকৃত গেস্ট হাউস শিক্ষকদের বঞ্চিত করে, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ কোটির অধিক টাকা রাজশাহীস্থ একটি বেসরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডেপোজিট করা হয়েছে। সেই টাকার বাৎসরিক ইন্টারেস্ট কোথায় ব্যয় হচ্ছে, তার কোনো হিসেবে নেই।

উপাচার্যের চার বছর মেয়াদকালে প্রায় এক হাজার দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন। এছাড়াও বহু অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন।

অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে এই উপাচার্যকে অপসারণের দাবি জানান শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. মাহমুদুল আলমসহ ৪৭জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে জামালপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষকরা।

(আরআর/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০২২)