নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়া উপজেলার সন্ত্রাসের জনপথ খ্যাত কলম ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে কামাল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি ও কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। 

মঙ্গলবার সকাল ৯ টার দিকে কালিনগর গ্রামে জনৈক এরশাদের বাড়ির পিচনের রাস্তায় এই বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা পরে কামাল হোসেনের লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয় বলে নিহতের পরিবার জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তাৎক্ষনিক নিহত কামালের মৃতদেহের হদিস করতে পারেনি। পরে গুরনই নদী থেকে ৯ ঘন্টা পর কামালের মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত কামাল হোসেন কালিনগর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ফজলার রহমান ফুনু হত্যার আসামী বলে পুলিশ জানায়।

নিহতের ছোট ভাই বদর উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় তার বড় ভাই কামাল হোসেন বাড়ি থেকে বিলদহর বাজারে যাচ্ছিল। পথে প্রতিবেশী এরশাদের বাড়ির পেছনে রাস্তায় এরশাদ ও বদি মোল্লার নেতৃত্বে ৮/৯ জন সন্ত্রার্সী তার ভাইকে প্রকাশ্যে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা তার ভাই কামালের গলা কেটে হত্যা করে উল্লাস করে। পরে তারা লাশ টুকরো করে কেটে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া গুড়নই নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এই নৃশংস ঘটনার সময় সে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় হত্যাকারীরা তার দিকে তেড়ে আসলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এই হত্যাকান্ডের সময় গুলি বর্ষন করে এলাকায় আতংকের সৃষ্টি করা হয়। তার ভাইয়ের হত্যাকারীরা সকলেই আওয়ামীলীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা- কর্মী। কি কারনে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সেবিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা বলে জানান। তার ভাই পেশায় একজন কৃষক হলেও বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে জানান। তবে সে কিছুদিন থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী এরশাদ, আলম, বদি, গোলাম ও আকতারের সাথে ঘোরাফেরা করতো।

এদিকে প্রকাশ্যে কামাল হোসেনকে গুলি ও কুপিয়ে, জবাই করে লাশ গুড়নাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার সময় এলাকাবাসী নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে। এবিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। নিহত কামাল হোসেন সাবেক চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান ফুনু হত্যা মামলার ৫নম্বর আসামী। তবে কামাল হোসেন ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সদস্য ছিল বলে নিশ্চিত করেছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক।

উল্লেখ্য দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকায় অভ্যন্তরীন কোন্দলে একের পর পর খুন হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধ সহ এলাকার আধিপত্ত্য নিয়ে সাম্প্রতিককালে ইউপি চেয়ারম্যান ফুনুসহ ৬ জন খুন হয়েছে বলে এলাকাবাসীরা জানায়। এই হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তাৎক্ষনিক নিহত যুবদল কর্মী কামালের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি। পরে পুলিশ সুপার বাসুদেব বনিক,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সী শাহাবুদ্দিন সহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তাৎক্ষনিক স্থানীয়দের কাছে থেকে ঘটনার বর্ননা শোনেন।

এদিকে এই হত্যাকান্ডের ৯ ঘন্টা পর সন্ধ্য ৬ টার দিকে একদল ডুবরী বারনই নদী থেকে যুবদল কর্মী কামাল হোসেনের মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধার করেছে। ডুবরী দল তার খন্ডিত মাথা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তবে রাত হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত রাখা হয়। সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম এবিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিকেল থেকে রাজশাহী থেকে ২ সদস্যের ডুবরী দল ও নাটোর ফায়ার স্টেশন কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বারনই নদীতে নিহত কামালের মৃতদেহ উদ্ধারে অনুসন্ধান করতে থাকে। কালিনগর এলাকার ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশ’ গজ দুরে ডুবরী দলের সদস্যরা নিহত কামালের মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধার করে। তিনি জানান, পুলিশ সুপার বাসুদেব বনিকের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজের তদারকি করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

(এমআর/এটিআর/অক্টোবর ১৪, ২০১৪)