এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : প্রেস নোটে ঘোষিত বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলার ১৫ ইউনিটের নেতারা। শনিবার (১৯ নভেম্বর ২০২২) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান।

ঘোষিত কমিটি বাতিল করে বিষয়টির সুরাহা করা না হলে বগুড়ায় ছাত্রলীগের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে এবং কোন সহিংস ঘটনার সূত্রপাত হলে সেই দায়ভার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের ওপর বর্তাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁসিয়ারি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বগুড়া জেলায় ১২টি উপজেলাসহ বিভিন্ন কলেজে ছাত্রলীগের ১৯টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে আদমদীঘি ও সোনাতলা উপজেলা এবং সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ও গাবতলী ডিগ্রি কলেজে কোন কমিটি নেই। অপর ১৫ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনে দাবি উপস্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বগুড়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ওবাইদুল্লাহ সরকার স্বপন। তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। সেই কমিটি দেখে শুধু বগুড়ার রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষও হতবাক। দুঃসময়ে ও দুর্দিনের ত্যাগী-পরিশ্রমী রাজপথের একনিষ্ঠ কর্মীদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুঃসময় ও দুর্দিনের ত্যাগী পরিশ্রমী রাজপথের একনিষ্ঠ কর্মীদের বাদ দিয়ে অর্থের দাপটে বাণিজ্যিক উপায়ে হাইব্রিড নতুন মুখদের কমিটিতে পদায়ন করার কারণে বগুড়ায় দলীয় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব নিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করায় কমিটি বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু সময় ক্ষেপনের পরে তারা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় পুনরায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয় এবং অযোগ্য কমিটিকে বগুড়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সত্বর এই অনৈতিক কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন না করা হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কমিটিতে যাঁকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে তিনি গত বছর পূজার সময় মদ্যপ অবস্থায় শহরের চেলোপাড়ায় গণপিটুনিতে আহত হন। সাধারণ সম্পাদককে বগুড়ার রাজনৈতিক অঙ্গণে কেউ চেনে না, বগুড়ার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনি ছাত্রও নন। এছাড়াও এই কমিটিতে মাদকব্যবসায়ী, মাদকসেবী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, সমকামী, অপহরণকারী এমন অভিযোগে অভিযুক্তরা স্থান পেয়েছে। এই কমিটি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তারা আরো জানান, অথর্ব অযোগ্য কমিটি বিপুল অর্থের বিনিময়ে গঠিত তার প্রমাণ ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বগুড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ ইমাম বাকের-এর কল রেকর্ড প্রমাণ করেছে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অর্থের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সরকারি আযিযুল হক কলেজের কমিটিও অর্থের বিনিময়ে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অনৈতিক অথর্ব বগুড়া জেলা কমিটি বাতিলের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের ১৫ টি ইউনিটের মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলা কমিটির সভপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাব্বী স্বাধীন, বগুড়া শহর শাখার সভাপতি সুজিত কুমার, শেরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বগুড়া সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামীম হোসেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সভাপতি কেএম মোজাম্মেল হোসাইন বুলবুল, কাহালু উপজেলা শাখার সভাপতি সৌগির আহমেদ রিতু, নন্দীগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদ, শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুম পারভেজ মুকুল, দুপচাঁচিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূর ইসলাম, ধুনট উপজেলা শাখার সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, গাবতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব, সারিয়াকান্দি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল, সরকারি নাজির আকতার কলেজ সোনাতলা শাখার সভাপতি মোঃ সুমন, সরকারি সান্তাহার ডিগ্রী কলেজ শাখার সভাপতি রাজন কুমার সহ প্রমুখ।

(এটিআর/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০২২