শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে আসুরার বিলে আবাদি জমি রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে ভুক্তভোগী কৃষক ও তাদের পরিবার। অসংখ্য কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যানার-ফ্যাস্টুন নিয়ে বিলের ধারে সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে, আন্দোলন করে লাভ নেই,বাঁধ নির্মাণ হবেই।

আজ বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে আসুরার বিলে আবাদি জমি রক্ষায়- বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলন করেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ,আবাল-বৃদ্ধ,বনিতা বিলের পুরনো বাঁধে ব্যানার পোস্টার হাতে নিয়ে আন্দোলন করছে। আন্দোনে অংশ নেয়া কৃষক মতি লাল জানালেন,নতুন করে বিলে বাঁধ স্থাপনের করলে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদ থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। এতে তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ঘরে ফসল তুলতে না পারলে পরিবার-পরিজন করতে হবে মানবেতর জীবন-যাপন। প্রায় ২ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার এই আসুরার বিল।

কৃষক সমশের আলী জানান, নাম বিল হলেও দেখতে নাদীর মতো। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে সেখানে ধানের আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে বিলপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ।

আরেক ভুক্তভোগী কৃষাণী রাবেয়া বেগম জানালেন, এই বিলের জমিই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। বিলের জমি চাষাবাদ করে আমাদের জীবন চলে। নতুন করে বাধ নির্মাণ করলে ধানের জমি নষ্ট হবে। আবাদ না করলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলব কি করে?

ফজিলা বেগম জানালেন, বাধ নির্মাণ করলে এই বিলে পানি জমে থাকবে। আবার ফসলের জমি কমে যাবে। আমরা চলবো কি করে।

৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার জানায়, আমি লেখাপড়া করি। বাবা এই বিলের জমি আবাদ করে আমাদের সংসার চালায়। আবাদ না হলে আমার লিখা পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয় কৃষক রেজাউল করিম অভিযোগের সুরে জানায়, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই বিলের জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে বাধ এবং ড্রেন তৈরি করতে চাই। এটা আমরা হতে দিবো না। আমরা চাই বিলের মাঝখানে আগের পুরনো ড্রেনটি তারা খনন করুক। এতে আমাদের অনেক উপকার হবে।

তিনি বলেন, এই বিলের জমি রক্ষার্থে আমরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দিবো। যতদিন আমাদের দাবি না মানা হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রাকিবুল হাসান জানান, পরিবেশ,প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় ঐতিহাসিক আসুরা বিল খনন ও বাঁধ নির্মাণে ৬ কোটি টাকার প্রকল্প এসেছে। কাজ শুরুর আগে আমাদের প্রকৌশলীরা আজ বুধবার সার্ভে (জরীপ) করতে গেলে তাদের বাধা প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে থানা-পুলিশের মাধ্যমে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আসুরা বিলকে বাঁচাতে বাঁধ নির্মাণ এবং খননের বিকল্প নেই।

(এস/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২২)