রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির ভূমিহীন নেতা রবিউল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। যথাক্রমে রবিবার বিকেলে ও সোমবার বিকেলে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।

দেবহাটা থানা থেকে রবিবার আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার কালিগঞ্জের নলতা এলাকা থেকে রবিউল গাজীকে জনতার সহায়তায় পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সে পড়ে যেয়ে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

তবে রবিবার বিকেলে সাতক্ষীরা আদালত চত্বরে খলিশাখালি মুজিবনগর ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক রবিউল গাজী জানান, শনিবার সকাল ১১টার দিকে তিনি কালিগঞ্জের নলতা মাছের বাজার থেকে দেবহাটার ভূমিদস্যু সখীপুরের সুরুজ কাজী, আহসান ও আব্দুল আজিজসহ ১৪/১৫ জন তাকে আটক করে মারপিট করতে করতে একটি গাড়িতে করে দেবহাটায় নিয়ে আসে। তাকে পুলিশে দেওয়ার পর সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কয়েক মিনিট রাখার পর একটি ব্যবস্থাপত্র নেওয়ার পর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার রাতে থানার মধ্যে তাকে কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক মেঝেতে শুইয়ে হাত ও পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পায়ের তলায় দুই হাঁটু ও দুই কনুইতে পেটানো হয়। তাকে দেবহাটা থানার বিচারাধীন একটি অস্ত্র আইনের মামলায়, একটি ডাকাতির চেষ্টার মামলাসহ চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

অপরদিকে সোমবার আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে যে, সোমবার নওয়াপাড়া ইউপি’র আটশত বিঘা এলাকা থেকে ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে।
দেবহাটার পারুলিয়া ইউপি'া ৯ নয় ওয়ার্ড সদস্য ও ভূমিহীন নেতা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী হামিদা খাতুন জানান, জমির মালিক দাবিবাররা প্রশাসনের সহায়তায় গত ১৫ নভেম্বর খলিষাখালিতে জনমানবশূন্য ৭৮৫টি ভূমিহীন পরিবারের ঘরবাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরপরই তাদের বাড়ি ও পুকুরে (নোড়ারচকে) লুটপাট ও ভাঙচুর চালাননো হয়। লুটপাট করা হয় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল। এরপর থেকে তারা জীবনের নিরাপত্তার জন্য সন্তান সন্ততি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে তাদের ছয় বছরের মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে স্বামী ইসমাইল হোসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে আনন্দ সিনেমা হল ও মোস্তফার গলির মধ্যবর্তী স্থান থেকে দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয়জন তার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে মেয়েসহ গাড়িতে তোলে। গাড়িটি কারওয়ান বাজারে পৌঁছালে মেয়ের চিৎকালে পুলিশ ফিরে এসে মেয়েটিকে তাদের বাসার নিকটে ছেড়ে দিয়ে যায়।

ইসমাইল হোসেন সোমবার বিকেলে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে আসার পর শনিবার সন্ধ্যার দিকে দেবহাটা থানায় নিয়ে আসা হয়। শনি, রবি ও সোমবার তিন রাত থানায় রেখে গ্রেপ্তারের পরবর্তী ৭৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে দেবহাটা থানার বিচারাধীন একটি অস্ত্র আইনের মামলায়, একটি ডাকাতির চেষ্টার মামলাসহ তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ঢাকার সুভদ্রা চক্রবর্তীর একটি চেক ডিজঅনারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২২)