শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে পথচারীর থাপ্পড়ে নিহত  ইজিবাইক চালক খালেকুল ইসলামের (৪০)  হত্যাকারিকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমিতি।
এই দাবিতে রবিবার জেলায় সকাল ৬ থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সকল প্রকার ইজিবাইক চলাচল বন্ধ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে সমিতি। এই আন্দোলন ও দাবি বাস্তবায়নে আজ শনিবার ( ০৩ ডিসেম্বর)  রাতে মাইকিং করেছে সংগঠনটি।

দিনাজপুর ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক মালিক ও শ্রমিক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক মো. রাজু আহমেদ জানান, আমরা চাই- এর একটা সুষ্টু বিচার হোন। আসামীকে গ্রেফতার করা হোক। যারা দিন-রাত ২৪ ঘন্টা মানুষের সেবায় কাজ করেন,তাদের মানুষ না ভেবে উল্টো ঠুনকো ঘটনায় হত্যা করা হয়। এটা অমানবিক। মানবধিকার চরম ভাবে লংঘন। এর বিচার চাই। অবিলম্বে গ্রেফতার চাই,আসামীকে। তানাহলে আরো কঠোর আন্দোলবে যাবো আমারা।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিনাজপুর শহরের চুড়িপট্টিস্থ চুরিপট্রি এলাকায় যানজটে পড়ে ইজিবাইক চালক খালেকুল ইসলাম ও পথচারী সন্তোষ ডালমিয়ার মধ্যে কথাকাটির জেরে সন্তোষ ডালমিয়া কর্তৃক মারধরের শিকার হয়ে খালেকুলের মৃত্যু হয়। নিহত খালেকুল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মোহনপুর এলাকার মৃত ছাবের হোসেনের ছেলে। ব্যক্তিজীবনে তিনি চার ছেলেমেয়ের পিতা। অন্যদিকে ওই পথচারীর নাম সন্তোষ ডাল মিয়া (৫৭)। শহরের মালদহপট্টি এলাকায় মেঘা বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী।পরিবারের সদস্যদের জোর আপত্তির মুখেও পুলিশ দীর্ঘ ৮ ঘন্টা পর, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে।

২০ লাখ টাকার পরিবর্তে মাত্র ৪ লাখ টাকায় সমঝোথা হয়েছে দিনাজপুরে পথচারীর থাপ্পড়ে মারা যাওয়া ইজিবাইক চালক খালেকুল ইসলামের (৪০) এর ঘটনাটি। পরিবারের সদস্যদের জোর আপত্তির মুখেও পুলিশ দীর্ঘ ৮ ঘন্টা পর,মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে।

কতোয়ালী থানা পুলিশ দীর্ঘ অপেক্ষার পর খালেকুলের নিজ বাসা থেকে মরদেহটি রাত ১০ টায় ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পৌনে বারোটায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন খালেকুলের স্ত্রী নুরজাহান বেগম।

এর আগে শুক্রবার রাত আটটায় মালদহপট্টি এলাকায় ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ নিহতের স্বজনদের সাথে আলোচনা করেন। সেখানে তিনশত টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে অভিযুক্ত সন্তোষ কুমার ডাল মিয়া ও নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগম আপোষ মীমাংসা করে স্বাক্ষর করেন। স্ট্যাম্পে লিখা হয়েছে ইজিবাইক চালক খালেকুলকে সরিয়ে দিতে গিয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। সন্তোষ ডাল মিয়ার সাথে একটা ভুল বুঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কোন পক্ষই আদালত কিংবা অন্য কোন জায়গায় কোন অভিযোগ করবেননা।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।

তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে,জানান ‘নিহতের পরিবারের পক্ষে ২০লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিলো। পরে ৪(চার) লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। টাকা পরিশোধ করে অভিযুক্ত সন্তোষ কুমার ডালমিয়া ও নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগম আপোষনামায় স্বাক্ষর করেছেন।’ স্বাক্ষী হিসেবে ছিলেন আসাদুল ইসলাম, মিরাজ, নিশাত ইসলাম, বিশ্বনাথ আগরওয়াল, উদ্বিক ভৌমিক, মনিরুল ইসলাম, খাদেমুল ইসলাম সহ অনেকে রয়েছেন।

অন্যদিকে থানায় লিখিত অভিযোগে নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগম জানান, নিহত খালেকুলের ইজিবাইকের সাথে অজ্ঞাতনামা এক যাত্রীর ধাক্কা লাগে। তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্তোষ কুমার ডালমিয়াসহ আরো কয়েকজন খালেকুলকে কানের নিচে, ঘাড়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রহার করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে খালেকুলকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন(আরএস) মর্তুজা রহমান বলেন, শুক্রবার বেলা আনুমানিক একটায় খালেকুল নামের ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। পরে ইসিজি করে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১টা ২০মিনিটে হাসপাতাল থেকে ব্রড ডেড সনদপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, উভয়পক্ষের আপোষ মীমাংসার বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। নিহতের স্ত্রী কর্তৃক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। রাতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছে। মামলা নং-৪। সন্তোষ ডালমিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩জনকে আসামী করা হয়েছে। সন্তোষ ডালমিয়া পলাতক রয়েছেন। আসামীদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের বড় ভাই মিরাজুল ইসলাম(গ্রাম পুলিশ) বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় মিমাংসায় বসেছিলাম। চার লাখ টাকা নিয়ে খালেকুলের পরিবার মেনে নিয়েছে। আমরা আরো বেশি ২০ লাখ টাকা চাইছিলাম। যেহেতু তার চার ছেলে মেয়ে। এরমধ্যে তিনজনই নাবালক। আপোষনামাও হয়েছে। পরে রাতে পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য। সে সময় একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে পুলিশ।

(এসএএস/এএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০২২)