শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ‘হামার ছোইল কোনঠে আছে, তোমরা আনি দাও-হামার ছোইলোক।’ এমনি আর্তি দিনাজপুরেরর খানসামা উপজেলায় অপহত ৭ বছরের শিশু আরিফুজ্জামানের মা মেরিনা আক্তারের। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় খানসামা উপজেলার ইউপি ৪ নং খামার পাড়া ইউপি:র কায়েমপুর ডাক্তার পাড়া গ্রামে। 

সরেজমিনে আজ রবিবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের আতিউর রহমানের ছেলে এবং চেহেলগাজী মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র আরিফুরজ্জামান (৭) খেলতে বাড়ির বাইরে গেলে ২ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪ টায় নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজা-খুঁজির পরও তার সন্ধান পায়নি অভিভাকেরা।

আরিফুজ্জামানকে অপহরণের পর এক লাখ মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারিরা। এঘটনায় সন্দেহভাজন তিন যুবকে আটক করেছে পুলিশ। তবে অপহরণের দুই দিন অতিবাহিত হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি শিশুটি।

অপহরনের রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টায় শিশুটির দিন মজুর পিতা আতিউর রমানের কাছে মুঠোফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে জানায়, "ছেলেকে ফিরে পেতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে।" এই বলে ফোন কেটে দেয়।”

পিতা আতিউর রহমান বলেন, "ওই রাতেই মোট তিন বার ফোন দিয়েছে আমাকে। ২য় বার ফোন দিয়ে বলেছে, সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে এক লাখ টাকা নিয়ে যেতে। ৩য় বার বলেছে,কাউকে এবিষয়টি না জানানোর জন্য। বললে তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলবেও বলেছে। আমি গরীব মানুষ। তাদের কেঁদে কেঁদে আমার ছেলের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। ওরা ফোন কেটে দিয়েছে।"

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউ পি সদস্য মো: আকতার হোসেন বলেছেন, আমি শিশু অপহরণের বিষয়টি শনিবার সকালে তার পিতার কাজে জানার পর আইনের আশ্রয় নিতে বলি।তাকে নিয়ে থানায় যাই। একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আতিউর-মেরিনা দম্পতির তিন ছেলে। আরিফুজ্জামানেই ছোট। আরিফুরজ্জামান বাড়ির পার্শ্ববর্তী চেহেলগাজী মাদ্রায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে বলে জানিয়েছে, অপহৃত শিশুর মা মেরিনা আক্তার। তিনি বলেন, 'প্রতিদিনের নাগাল ছোইলটা হামার বাড়ি থাকি বের হইছে খেলিবার জন্যে। এইভাবে ছোইলটা হারাই যাবি ভাবোনি। হামার ছোইল কোনঠে আছে,তোমরা আনি দাও-হামার ছোইলোক।’

এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ওই এলাকা থেকে সন্দেহভাজন তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, কায়েমপুর মাস্টারপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সরিফুল (২৪), গফুর উদ্দীন শাহপাড়া গ্রামের ওবায়দুরের ছেলে শামীম (২২) ও একই এলাকার মো. রিয়াজুলের ছেলে শাহিনুর।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শিশু অপহরণের একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি,শিশুটি উদ্ধারের। সন্দেহভাজন তিন জনকে আটক করা হয়েছে সত্য। আমরা জিজ্ঞাবাদ করছি। জিজ্ঞাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। শিশুটি উদ্ধারে সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২২)