আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : টাকা ছাড়া কেউ কোন সেবা পাচ্ছে না বরিশালের গৌরনদী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে। হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেছেন পেনশনভোগীরাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। 

হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসরে যাওয়া একাধিক সরকারী কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘ বছর চাকুরী জীবন শেষ করে অবসরগ্রহন করে পেনশনের ফাইল নিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসে নিজেরা যখন সেবা প্রত্যাশী হয়ে যাই তখন আর ভোগান্তির কোন শেষ থাকেনা। নিজেদের কর্মস্থল থেকে সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হলেও নানান অজুহাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের চাহিদামত টাকা দেয়া হলে সহজেই ফাইল ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তারা আরও জানান, শুধুমাত্র পেনশন আটকে যাওয়ার ভয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিয়েও নিরব থাকতে হচ্ছে।

অবসরে যাওয়া হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী বলেন, পেনশনের সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে থাকার পরও ফাইলে স্বাক্ষর করার জন্য হিসাবরক্ষণ অফিসে ২২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। কার কাছে টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অডিটর লিটন বাড়ৈর হাতে টাকা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত এক নারী কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, বিল নিয়ে গৌরনদী হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলেই অডিটর লিটন বাড়ৈ টাকা দাবী করেন। লিটনকে টাকা না দিলে খারাপ আচরণ করেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে অডিটর লিটনের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে লিটন।

হাসপাতালে ৫০ দিন অনুপস্থিত ডাক্তার, তবুও তুলে নিলো বেতন ঃ উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে ২২ মে পর্যন্ত এক মাস ২০ দিন গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্যে কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ নাজনিন আক্তার সেতু হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলো। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু নোমানকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। এরপরও অননুমোদিত ছুটির বেতন ছেড়ে দিয়েছে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এমনকি ওই চিকিৎসকের এলপিসিতে অননুমোদিত ছুটির বিষয়টি লেখার নিয়ম থাকলেও রহস্যজনক কারনে তা লেখেনি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

সূত্রে আরও জানা গেছে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অনিয়মের প্রতিবাদ করায় হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কোন ফাইলে স্বাক্ষর করবেনা বলে হুমকি দিয়েছেন। হয়রানির ভয়ে নাম পরিচয় গোপন রেখে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, এক মাস ২০ দিন হাসপাতালে অনুপস্থিতির বিষয়ে ওই ডাক্তারকে শোকজ করে জবাব দিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু সে (ডাঃ নাজনিন আক্তার সেতু) শোকজের সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি। এ জন্য তার ছুটি অনুমোদন করা হয়নি। এ বিষয়ে ডাক্তার নাজনিন আক্তার সেতু জানান, গত এপ্রিল থেকে বেতন উত্তোলণ করতে পারছিনা। এখন পর্যন্ত এলপিসি হাতে পাইনি। তাতে কি লেখা আছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

অফিস কক্ষেই সিগারেট সেবন করেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা

সরকারি বিধি অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি অফিসে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি অফিসে বসেই চলছে গৌরনদী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু নোমানের আয়েশি ধূমপান। অফিস কক্ষে সেবাগ্রহীতাদের সামনে সিগারেট সেবনের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এ ব্যাপারে অডিটর লিটন বাড়ৈর কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি (অডিটর লিটন) কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনটি কেটে দেন।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু নোমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ডাক্তার নাজনিন আক্তার নামের কোন ডাক্তারকে আমি চিনিনা। অফিসকক্ষে ধুমপানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ধুমপান করিই না।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কোন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ ব্যাপারে ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস্ মোঃ একে আজাদ খান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২২)