নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের জামগ্রাম ও তিলাবাদুরী গ্রামের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবী গ্রামের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ। এই দুই গ্রামের  বাসিন্দাদের তৈরি ৪টি বাঁশের সাঁকোই খালের দুপারের মানুষের চলাচলের  একমাত্র ভরসা। একটি ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দু’পাড়ের সাধারন মানুষ, শিক্ষার্থী ও কৃষক। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে একদিকে কৃষকরা যেমন কষ্টভোগ করেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারিদেরও পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। এছাড়া খালের অপর পাশে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে মরদেহ নিয়ে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। তাই দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজে ঘেরা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গ্রামের নাম হচ্ছে জামগ্রাম ও তিলাবাদুরী। গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে রতনডারা খাল। যে খালে সারাটা বছর জুড়ে পানি থাকে। সম্প্রতি খালটি এলজিইডির আওতায় পুন:খনন করায় তা অনেক গভীর হয়েছে। এ খালের পূর্বপাশে শতশত পরিবারের বসবাস। খালের পশ্চিম দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। গ্রামের শতশত কৃষক এ মাঠেই বোরো ও আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে থাকেন। গ্রাম ও মাঠের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালের ওপর কোন সেতু না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে তাদের কষ্টসহ দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। এদিকে মাঠ ছাড়াও ওই খালের পশ্চিমে রয়েছে গ্রামবাসীর কবরস্থান। যেখানে লাশ বহনে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বর্তমানে এই খালের তিলাবদুরী নামক স্থানে একটি, জামগ্রাম মাদ্রাসা বাজার সংলগ্ন স্থানে একটি, জামগ্রাম পশ্চিমপাড়া সংলগ্ন স্থানে একটি ও জামগ্রাম ঢাকাপাড়া সংলগ্ন স্থানে একটি বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে জামগ্রাম, ভোঁপাড়া, শলিয়া, কাশিয়াবাড়িসহ ১০-১২টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাদের। বছরের প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এই সব ঝুঁকিপূর্ন বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। কোন অসুস্থ্য রোগীদেরও ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। জরুরী স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ অতীব জরুরী। একটি ব্রিজের অভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-যাপনে এখনোও আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করতে পারেনি।

স্থানীয় জাম গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য বাবলু ্এবং সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০বছর পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও আমরা আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত। রাস্তা পারা-পারের জন্য নেই ব্রিজ। সরকার আসে সরকার যায় আমাদের সেতু কেউ করে দেয়না। একটি সেতুর অভাবে কত ভোগান্তি পোহাতে হয়,সেটা কেউ বুঝতে চায়না।

তারা বলেন, আমাদের জাম গ্রামের পাশে ৩কিলোমিটার দূরে ভোঁপাড়া গ্রামে স্কুলে যায় এই গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী। এই সাঁকো যখন ভাঙ্গা থাকে তখন আরো বিপদ হয়। ১০-১২কিলোমিটার ঘুরে ৩০থেকে ৪০টাকা খরচ করে ঘুরে শিশুদের স্কুলে যেতে হয়। খালের ওপারে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা ফসলি জমি। আবার কবরস্থানও আছে। সব মিলে একটি ব্রিজ খুবই প্রয়োজন। তিলাবদুরী গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া খাতুন বলেন, পার্শ্ববর্তী ভোঁপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যেতে অনেক সময় ভয় লাগে। একবার সাঁকোতে পা আটকে গিয়েছিল। একটি ব্রিজ আমাদের দরকার। দ্রুত যেন ব্রিজ করা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।

নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামগ্রাম ও তিলাবদুরী গ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে। সেই এলাকায় ৪টি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এলাকাবাসীর যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া, ফসলী জমি সব মিলে তাদের কথা চিন্তা একটি ব্রিজ খুবই প্রয়াজন। আমরা স্থানগুলো পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে আলাপ করে ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়াা হবে।

এ ব্যাপারে নওগাঁ -৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ফসল আনা-নেয়া, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের যাতাযাতের জন্য একটি ব্রিজ খুবই জরুরি। ওই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবী খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের। আমি এ বিষয়ে যথাযথ কৃর্তপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য যা যা করা দরকার সেটা করবো। আশা করছি এ ভোগান্তি আর বেশি দিন পোহাতে হবেনা।

(বিএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২২)