আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সংসদে নতুন একটি আইন পাস হয়েছে। এখন থেকে বিশ্বের বৃহত্তম এ মুসলিম দেশে বিয়ের আগে দৈহিক সম্পর্কের শাস্তি হিসেবে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

জানা যায়, এ আইনের উল্লেখযোগ্য সংশোধনগুলো হলো- বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের জন্য এক বছর পর্যন্ত জেল, প্রেসিডেন্টকে অপমান করা ও প্যানকাসিলা নামে পরিচিত জাতীয় আদর্শের বিপরীত মতামত প্রকাশের জন্য শাস্তি প্রণয়ন।

আইনটি তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রণেতা বামবাং উরুয়ান্তো জানান, নতুন এ আইন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া বিদেশিদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

‘তবে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া কেউ এ আইনের আওতায় পড়বেন না। কেবল অভিযুক্তদের নিকটাত্মীয়রা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কারও স্বামী-স্ত্রী যদি অন্য কোনো নারী-পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান, তাহলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিও পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে পারবেন। অন্যদিকে, অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে প্রধান সাক্ষী হিসেবে অভিযোগ দিতে পারবেন তাদের মা-বাবা।

ইন্দোনেশিয়ায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এ আইন সংসদে প্রথম উত্থাপন করা হয় ২০১৯ সালে। সে বছর অনেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দেশটির রাজধানী জাকার্তা একপ্রকার অচল হয়ে গিয়েছিল।

জানা যায়, সেসময়ের খসড়া ওই আইনে শুধু বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা উল্লেখ ছিল না। জাতীয় পতাকা ও প্রেসিডেন্টকে অবমানার শাস্তির পাশাপাশি গর্ভপাতের জন্য চার বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছিল, যদিও এখন তা পাঁচ বছরের করা হয়েছে।

অবশ্য দেশটির আচেহ প্রদেশে আগে থেকেই এসব বিধান ছিল। সেখানে নারী-পুরুষের মেলামেশা, যৌন সম্পর্ক ও মদ্যপান জনসম্মুখে করলে বেত্রাঘাত করা হয়।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলে, দেশটির অনেকে আইনটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেও, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এধরনের আইন পাস হলে সারাবিশ্ব ইন্দোনেশিয়াকে অন্য চোখে দেখবে। যা পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কয়েক দশক ধরে আইনটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে ইন্দোনেশিয়ার উপ-আইনমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড ওমর শরিফ হিয়ারিয়েজ গণমাধ্যমকে বলেন, ১৫ ডিসেম্বর নতুন এ ফৌজদারি দণ্ডবিধি পাস হতে পারে। ইন্দোনেশিয়ান মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতি রেখে আইনটি প্রণয়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। আশা করি, এর মাধ্যমে গুরুতর কিছু অপরাধ দমন করা যাবে।

এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি ইসলামি সংগঠন খসড়া আইনটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে বিরোধীরা বলছেন, আইনটি ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পতনের পর কার্যকর হওয়া উদার সংস্কারগুলোর পরিপন্থি।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৬, ২০২২)