রায়পুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার ফি আদায় করা হয়েছে। উপজেলার ১২১টি বিদ্যালয়ে শতভাগ আদায় শেষ হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ লাখ টাকারও উপরে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ‘শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো ফি আদায় করা যাবে না’ বলা হলেও এক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ইতোমধ্যে ফি আদায় শেষ হয়েছে। 

ফি আদায়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এটি ধামাচাপা দিতে ওঠেপড়ে লেগেছেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে বলেন। কেউ আসলে যেনো তারা বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষকদের বেইজ্জতি না করেন সেজন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরিভাবে প্রধান শিক্ষকদের বৈঠক ঢাকা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ৪টার সময় এ বৈঠক হওয়ার কথা।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সারাদেশের মতোই এ উপজেলা থেকে ২২ হাজার ৭৬৩ জন পরীক্ষার্থী এ মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার করবে। বিদ্যালয়গুলোতে প্রাক প্রাথমিক শাখা, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে শিক্ষার্থী প্রতি ৫০ টাকা এবং তৃতীয়, চুতর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ১০০ টাকা করে পরীক্ষা ফি আদায় করা হয়। কোনো রশিদ ছাড়া মৌখিকভাবে এ ফি নেওয়া হয়। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ইতোমধ্যে শতভাগ ফি আদায় শেষ হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলিয়ে ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে মোট ২২ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এরমধ্যে প্রাক প্রাথমিক শাখায় ২ হাজার ৭৭৩ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৩ হাজার ৪৮০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩ হাজার ৭২৪ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৪ হাজার ১৬৫ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ৪ হাজার ৪১৭জন শিক্ষার্থী। এবার পরীক্ষা ফি না নিয়ে বিদ্যালয়ের জন্য আনুসাঙ্গিক খাত বা স্লিপ ফান্ড থেকে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাধমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে।

ক্যাম্পেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও হাওলাদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্দেশনা মেনে এবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি আদায় করিনি। ফি নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা বলে থাকলে সেটি সঠিক নয়।

রায়পুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালেব ও স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার কখন আনুসাঙ্গিক খাত বা স্লিপ ফান্ডের টাকা দেয় তা নিশ্চিত নয়। এখন ব্যয় নির্বাহের জন্য আমরা পৌরসভা ক্লাস্টারের শিক্ষকরা বসে খরচ মেটানোর জন্য পরীক্ষা ফি নিয়েছি।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, নিষেধ সত্ত্বেও মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য ফি আদায় দু:খজনক। আমরা বিষয়টি জেনেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী বলেন, ফি আদায়ে মন্ত্রণালয়ের নিষেধ থাকার বিষয়টি বার বার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এরপরও ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্্জন দাশ সাংবাদিকদের বলেন, নিষেধ থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের কাজ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সরকারি নিয়ম না মানা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেনো তাঁরা এ ধরণের কাজ করেছেন এজন্য সকল প্রধান শিক্ষককে বৈঠকের জন্য ডাকা হয়েছে।

(পিআর/এসপি/ডিসেম্বর ০৭, ২০২২)