জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চান আগামী ৯ ডিসেম্বর সম্মেলনে গ্রহণযোগ্য কাউকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক পদে নতুন কাউকে আনা হোক। সব মিলিয়ে পরীক্ষিত ডায়নামিক কাউকে চাইছে পাঁচ ইউনিয়নের আ.লীগ নেতারা কর্মীরা।

আগামী ০৯ ডিসেম্বর কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনটি উপজেলার ফকিরন্নিরহাট রাস্তার মাথা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আ’লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম ১৪ আসনের (চন্দনাইশ-আংশিক সাতকানিয়া) এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ.টি.এম পেয়ারুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন কর্ণফুলী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী ও সঞ্চালনায় থাকবেন কর্ণফুলী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি।

ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলার বাঘা বাঘা বিএনপি নেতাদের মোকাবিলা করে আগামী রাজনীতিতে টিকিয়ে থাকতে হলে এবং ভেঙ্গে পড়া সাংগঠনিক কাঠামোকে দাঁড় করাতে চাইলে তৃণমূল পর্যায় থেকে ওঠে আসা নেতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কারণ জনতার আদালতে নানাভাবে পরীক্ষিত নেতারাই দলের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়।

আর হাইব্রিড কিংবা অনুপ্রবেশকারীরা সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকেন। সে প্রমাণও এ উপজেলায় ভুরি ভুরি। কর্ণফুলীতে এবার নতুন কাউকে সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে দেখতে চায় তৃণমূল। এর কারণও নাকি অনেক। তৃণমূলের ভাবনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁরা গতি ফেরাতে চান নতুন কাউকে দিয়ে। যদিও নতুন কাউকে সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে পাওয়ার আশা খুব ক্ষীণ।

তৃণমূলের টার্গেট আগামীতে বিএনপি নেতাদের সাথে লড়াই করে রাজপথে টিকে থাকতে হবে। কেনোনা দলের দুর্দিনে সুদিনের মাছিরা রাজপথে নামতে চান না। শুধু একাধিক দলীয় পদ-পদবী নিয়ে বিভোর থাকেন। যদিও কর্ণফুলীতে রাজপথের বহু লড়াকু সৈনিক রয়েছে। যারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি করতে করতে আওয়ামী লীগে আসীন। কিন্তু টপ সিটে এখনো বসতে পারেননি। এসব ত্যাগী নেতাকর্মীরাই মূলত দলের প্রাণ। কর্ণফুলী তৃণমূল এসব নেতাদের স্যালুট জানাতে চায় এই বৈশিষ্টের কারণেই। কারণ তারাই দলকে টেনে তুলবেন।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতাদের ভাবনায় যাদের নাম পুরো উপজেলায় আলোচনায় আসছে, তাঁরা হলেন-বর্তমান কমিটির সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি, দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ।

সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমির আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন হায়দার, শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম ফোরকান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সোলায়মান তালুকদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহেদুর রহমান শাহেদ, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমদ রাজা। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছে আরও অনেকের নাম।

যদিও পাঁচ ইউনিয়নের তৃণমূলের ভাবনা মূলত কয়েকজনকে নিয়ে। একটা গ্রুপ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির আহমদ কে নিয়ে চিন্তা করলেও অন্যান্য ইউনিয়নে তাঁর নিজস্ব বলয় না থাকায় তেমন অবস্থান নেই। দীর্ঘদিন ধরে অনেক নেতা আবার মূল পদে আসীন থাকলেও সুপার ফ্লপ বলা যায়। কারণ তাঁদের বাকশক্তি নেই। সাদাকে সাদা আর কালো কে কালো বলার সাহস দেখতে পায়নি তৃণমূল। তাই তাঁদের নিয়ে চিন্তা করছে না তৃণমূল। অনেকে পরিষদ চালানোতে দক্ষ হলেও দলের জন্য ফিট নয়।

এদের নিয়ে আগামীতে জাতীয় নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া কিংবা নৌকাকে বিজয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। উপজেলা আ.লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বর্তমান কমিটি তৃণমূলে কোন কমিটি দিতে পারেনি। কর্মী সৃষ্টি করতে পারেনি। এজন্য নতুন কাউকে নিয়ে চিন্তা করার।’

বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান খাঁন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক ৩/৪টি মতবিনিময় সভা করেছি। তাতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে ওঠে আসা কেউ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক হোক। আমরা হাইব্রিড কাউকে চাই না। দলের জন্য অতীতে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন কাউকে দরকার।’

উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) মোঃ দিদারুল আলম বলেন, ‘আমি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীর কাছে অনেক ঋণি। তাদের ভালোবাসায় আজ আমি এত দুর আসতে পেরেছি। রাজনীতি করতে হলে নেতাকর্মীদের ভালোবাসতে হবে, সৎ থাকতে হবে, ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তবেই ভালোবাসা বা সফলতা আসবে।’

কে হচ্ছেন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। এ লক্ষে ইতোমধ্যে কর্ণফুলীর কয়েকটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘তৃণমূল থেকে উঠে আসাদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব আসলে দলের জন্য কল্যাণ হবে বলে মনে করি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তৃণমূল থেকে উঠে আসা দলের প্রতি শতভাগ আস্থাশীলদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব আশা করেন।’

কর্ণফুলীতে সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিলো ২০০৯ সালে। সে সময় পাঁচ ইউনিয়নে কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তৃণমূলের ভোটে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও হায়দার আলী রনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।

২০১০ সালে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয় এবং ৫ ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে শিকলবাহা ইউনিয়নে দিদারুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি ও আবদুল করিম ফোরকান কে সাধারণ সম্পাদক, চরপাথারঘাটা ইউনিয়নে সৈয়দ আহমদ সভাপতি ও জসিম উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক, পরে যিনি রোগে মারা গেলে কামাল আহমদ রাজা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে রফিক আহমদ সভাপতি ও মো. হারুনুর রশিদ কে সাধারণ সম্পাদক, জুলধা ইউনিয়নে আমির আহমদ সভাপতি ও রফিক আহমদ চেয়ারম্যান কে সাধারণ সম্পাদক এবং বড়উঠান ইউনিয়নে আমজাদ হোসেন সভাপতি ও আবদুল মান্নান খাঁনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

পরবর্তী ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর সৈয়দ জামাল আহমদকে সভাপতি ও হায়দার আলী রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। এডহক কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চললেও পূর্ণাঙ্গ করতে সে সময়ে বেগ পেতে হয় কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগকে।

২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে ৫ ইউনিয়নে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবরে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। কমিটিতে ফারুক চৌধুরীকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন।

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২২)