একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর থেকে অধেন্দু কুমার সরকার বুড়ো (৫০) এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পাংশা মডেল থানা পুলিশ। 

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামের মৃত দীনেশ সিকদার বসত ঘরের পেছনের আম গাছ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

মৃত অধেন্দু কুমার সরকার (বুড়ো) একই গ্রামের মৃত অশ্বিনী সরকারের বড় ছেলে। সে পেশায় কৃষক ছিলেন। তার স্ত্রীসহ দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত অধেন্দু কুমার সরকারের সাথে দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো মৃত দীনেশ সিকদার। গত ১ বছর আগে করো নাই আক্রান্ত হয়ে দীনেশ সিকদার মারা গেলে অধেন্দু তার পরিবারের দেখাশোনা করত।

সঞ্জয় কুমার সরকার (অধেন্দু কুমার সরকারের ভাই) বলেন, গত কাল রাত ১০ টার দিকে মৃত দীনেশ সিকদারের স্ত্রী বিউটি সিকদার ও তার মেয়ে অর্পনা সিকদার আমার ভায়ের বাড়ি আসে ডাকতে। রাতেই ভাই ওই বাড়ি যায়। তবে গত কাল রাতে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হওয়ায় আমরা বস্ত হয়ে যাই।সকালে জানতে পারি সে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে ঘটনাস্থলে এসে যা দেখলাম তাতে স্পষ্ট আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মৃত অধেন্দু কুমার সরকারের স্ত্রী বলেন, গত কাল রাতে বিউটি আর তার মেয়ে অর্পনা আমাদের বাড়ি আসে আমার স্বামীকে ডাকলে। ওদের যেকোনো কিছু হলে ওরা আমার স্বামীর কাছে আসে। তখন আমার স্বামী বাড়ি ছিল না। পরে বাড়ি এসে জানতে পেরে সে ওই বাড়ি যায়। আমি সারা দিন কাজ করার কারণে রাতে ঘুমিয়ে যায়।ভোররাতে ঘুম ভাঙলে স্বামীকে পাশে না দেখে রাস্তায় বেড় হলে একজন আমাকে বলেন তুমার স্বামী গলায় দড়ি দিয়া হত্যা করেছে। আমি মানি না আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। আমার স্বামীরে উরাই ডেকে নিয়ে মেরে ফেলছে।

অর্পনা সিকদার বলেন, গত কাল রাতে আমি এবং আমার মা অধেন্দু কাকার বাড়ি গেছিলা।তার সাথে আমার বসত বাড়ির জমি নিয়ে ৮ মাস যাবত ঝামেলা চলছে। সে আমাদের ফোন রিছিভ না করার কারণে। অধেন্দু কাকা কে আমরা অঘাত বিশ্বাস করতাম। তিনি গত আট মাস আগে ব্যাংক থেকে লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে বাড়ির ৪৬ শতাংশ জমি লিখে নেয়।সে জমি থেকে ৩০ শতাংশ বাজারে কাঠ ব্যাবসায়ী অসিত কুমার প্রামাণিক এর কাছে বিক্রি করে দেয়।মোট জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পারিবারিক ভাবে বসাবসিও হইছে।গত কাল রাতে তাকে না পেয়ে বাড়ি আসলে সে নিজেই রাত ১০.৪০ ফোন করে।তখন আমি তাকে জমির বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে সকালে এসে সব কথা বলবো। সকালে মা বাইরে টিউবয়েলের পারে গেলে দেখতে পায় আজ গাছে লাশ ঝুলছে। আমাদের সাথে ষড়যন্ত্র করে আমাদের কে ফাসানোর জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

অসিত কুমার প্রামাণিক বলেন, আমি ২২ লক্ষ টাকা দিয়ে অধেন্দু কুমার সরকারের কাছ থেকে ৩০ শতক জমি কিনছি।আমি কাঠের ব্যবসা করি তাই কাঠ রাখার জন্য জায়গার দরকার হয়।আমি রাস্তার পাশে কাঠ রেখছি।আমার কেনা জমির বেশিরভাগ অংশই তারা ভোগ করছে। আবার ঐসব জমির তেমন প্রয়োজন হয় না বলে আমিও কিছু বলি না। তবে ওই আত্মহত্যার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

পাংশা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ইফতে খারুল আলম প্রধান লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডিডি) মামলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৯, ২০২২)