অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকূপায় চলছে রমরমা সুদের ব্যবসা। প্রতি মাসে হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত সুদ দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বৃদ্ধি পায়। পরে না দিতে পারলে মাঠের জমি, গরু এমনকি বসতভিটা পর্যন্ত লিখে দিতে হয় সুদ ব্যবসায়ীদের নামে। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এরই মধ্যে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। সুদের ব্যবসা কয়েক বছর ধরে চলছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। সুদের টাকা নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, সুদি মহাজনরা ঋণ দান করে মাসিক শতকরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। এরা পাঁচ দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
ঋণ দান কালে এরা ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে সই নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্ল্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকে। কোনো কোনো মহাজন আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারে না।

চাঁদপুর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী মোজাহার হোসেন জনতা ব্যাংকের ব্যাংক চেক দিয়ে সুদি মহাজন আলতাফ হোসেন আলতুর কাছ থেকে অল্প কিছু সুদে টাকা নেয়। পরে টাকা দিতে না পারায় তার নামে ঝিনাইদহ আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নয় লাখ টাকার মামলা ঠুকে দেয়।

মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক শিমুল মিঞা কৃষি ব্যাংকের ব্যাংক চেক দিয়ে এক প্রভাবশালী সুদি মহাজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার সুদ নিয়েছিল। কয়েকমাসের মধ্যে সুদসহ পুরো টাকা পরিশোধ করলেও তার নামেও বিশ লাখ টাকার মামলা ঠুকে দেয় মহাজন। এছাড়াও টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সুদখোররা অনেক সময় বাড়ি এসে টাকার জন্য গালাগালি করে। অপমান করে।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শৈলকূপা উপজেলায় জমজমাটভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মহাজনরা। হরিহরা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, ব্রাহিমপুর গ্রামের আমজাদ মোল্ল্যা,রবিউল ইসলাম, রাসেল হোসেন,ভাটই বাজারের টিটু মোল্লা ও টিএ রাজু, চাঁদপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন, আনারুল ইসলাম, রাজু হোসেন ও মো: বাবু,কাঁচেরকোল গ্রামের ইলিয়াস, লতিফ বাঙ্গাল, খন্দকবাড়ীয়া গ্রামের লাল্টু, কচুয়া গ্রামের মেনু লস্কর, শেখপাড়া এলাকার সিদ্দিক শেখ, সাঈদুর রহমান, কোরবান আলী, সারুটিয়া সুদে কানাই ও রবিউল ইসলাম, হাকিমপুর ইউনিয়নের মান্নান মেম্বারসহ শতাধিক সুদি মহাজন গোটা উপজেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামে দাদন ব্যবসা চালিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বনি আমিন জানান, এ ধরনের ফাঁদে যাতে সাধারণ মানুষ না পরে সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন। ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ দাখিল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকূপা সার্কেল) অমিত কুমার বর্মন জানান, সমবায় সমিতি বা ব্যক্তিগতভাবে সুদের ব্যবসা কেউ করছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০২২)