প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : পৌষের হিমেল হাওয়া আর হাঁড় কাপানো শীতে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের মানুষ। পাশাপাশি গবাদী পশুগুলো খর খর করে কাঁপছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অধিদপ্তর কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছিন্নমূল মানুষের গরম কাপড়ের চাহিদা বেশী মাত্রায় থাকলেও বাজারে দাম বেশী থাকায় অর্থের অভাবে কিনতে পারছেন না।এখন পর্যন্ত অন্যান্য বছরের ন্যায় জিও-এনজিও এবং সমাজের বৃত্তশালীরা শীতবস্ত্র হিসেবে গরম কাপড় বিতরণে হাতছানি দেয়নি। ছিন্নমূলদের গরম কাপড়ের জন্য সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উপজেলাবাসী।

কয়েকদিনের হিমেল হাওয়া ও জেঁকে বসা শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ। প্রচন্ড ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় দিন-মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কুয়াশার চাদর ভেদ করে দেরিতে সূর্য উদিত হলেও কমছে না শীত ও ঠান্ডার প্রকোপ।

গরম কাপড়ের অভাবে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে গ্রাম ও চরাঞ্চলগুলোতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন শিশু বৃদ্ধ ও বয়ষ্করা।

ঠান্ডাজনিত সর্দ্দি-কাশি, এজমা, নিউমোনিয়া, জ্বর ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। হাসপাতালে বেড়ে চলেছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। কনেকনে ঠান্ডাও কৃষকরা ইরি-বোরো চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুতির চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের বেড়েছে চরম দুর্দশা। ঠান্ডার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না অনেকে।
শীতার্ত মানুষের পাশাপাশি পশুপাখির দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়ে গেছে। ধানের বীজতলা ও আলুখেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(চলতি) তুহিন মিয়া জানিয়েছেন, কুড়িগ্রাম জেলার বুধবার(২৮ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১দশমিক ৪ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে ধারনা করছে আবহাওয়াবীদরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিলো ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ১২ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস, রবিবার ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ১৪দশমিক ৮ডিগ্রী সেলসিয়াস ও মঙ্গলবার ১২ দশমিক ৮ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৬দিনে তাপমাত্রা উঠা নামা করলেও হিমেল হাওয়ায় প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

চাকিরপশার ইউনিয়নের অটো বাইক চালক আঃ রহিম বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডায় মোর হাত পা গুলা টাটপার নাগছে। মানুষ কাজ কাম করতে পারছে না। তাই যাত্রীও কমে গেছে।’

মৎস্যজীবী রবি বলেন, ‘এল্যায় যে জাড়(শীত) বাহে, কাদো পানিতে নামা যায় না। শরীল শিংরি (শিউরে) উঠে।’
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ সম্পা আকতার বলেন, শীত বেশী হয়ে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই, বোরো বীজতলা রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

(পিএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০২২)