ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


পহেলা জানুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের বই উৎসব ২০২৩।দীর্ঘ দু’বছর পর এই উৎসব।২০২১ ও ২০২২ সালে প্রথম দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। করোনা অতিমারীর কারণে এই দুই বছর প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এবার তা নেই। তাই আজ রবিবার ২০২৩ সালের প্রথম দিনেই আড়ম্বরপূর্ণভাবেই বই উৎসব করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ (মাউশি) সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠাকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো আবারো ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণির একজন করে শিক্ষার্থীকে এক সেট করে বই তুলে দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তিনি।

শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। একটি জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হয়। আর এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই বর্তমান সরকার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে সারাবিশ্বে। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে নতুন বই। এই সময়ে সারাদেশে সাড়ম্বরে বই উৎসব পালিত হচ্ছে। নতুন বই শিক্ষার্থীদের জন্য এক অভিনব উপহার।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়। এ কার্যক্রম সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের এক কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১৮ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯২১টি এবং প্রাথমিক স্তরে দুই কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৪০৫টি বই বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রাক-প্রাথমিকের ৩৪ লাখ ১১ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮টি বই; প্রাক-প্রাথমিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫৮ হাজার ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচটি ভাষায় এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি বই বিতরণ হয়।

আরও উল্লেখযোগ্য হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৮ হাজার ৪০৫টি ব্রেইল বই বিতরণ করা হয়।২০১৯ সালে ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি বই। ২০২০ সালে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জন্য সম্পূরক কৃষি শিক্ষা বইটি। ওই বছর ৪ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৭ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭টি বই। এর পরপরই বিশ্বজুড়ে আঘাত হানে অতিমারী করোনা। লকডাউন-শাটডাউনে স্থবির হয়ে পরে পুরো বিশ্ব। কিন্তু তবুও চলমান থাকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বই ছাপার কাজ। তবে এ সময় কমে শিক্ষার্থী এবং বই ছাপানোর সংখ্যাও। এনসিটির মতে, ২০২১ সালে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে দেয়া হয় ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের স্তরের মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩ কপি পাঠ্যবই ছাপছে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

প্রাক-প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বইসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। মোট বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি বই ছাপা রয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিকে (স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি) স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫ কপি বই ছাপা হচ্ছে। এসব বই দিতে সরকারের বছর প্রতি খরচ হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব বই বিতরণ করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ (চলতি শিক্ষাবর্ষ) সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মোট ৪শ’ ৩৫ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার ৪১ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্রছাত্রীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার আনন্দ অনুভব করতে পারেন শিক্ষকরা। যে বিপুল আগ্রহ নিয়ে ওরা নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করে তার তুলনা যেন আর কিছুতেই হয় না। এই আনন্দের, উৎসাহের সত্যিই কোন তুলনা করা যায় না। সন্তান যখন নতুন বই নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফেরে তখন সেই খুশি স্পর্শ করে তার অভিভাবককে। হাসি ফোটে তার মুখেও। বার্ষিক পরীক্ষার পর থেকেই দেশের কোটি কোটি কচি মুখ অপেক্ষা করে থাকে নতুন বইয়ের জন্য।

আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- মানবজীবন প্রবাহের যাবতীয় ভাব-অনুভূতি জানার প্রবল আগ্রহ মানুষকে বইমুখী করেছে। কেননা যুগ যুগ ধরে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার অনুভূতি বুকে ধারণ করে অনাগত কালের মানুষের জন্যে চির অপেক্ষমাণ হয়ে আছে বই। অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যতের যােগসূত্র রচনা করে বই । তাই বই পড়ে মানবমন লাভ করে অনাবিল প্রশান্তি লাভ করে। নতুন শ্রেণির নতুন বই, নতুন গন্ধ। হাতে হাতে নতুন বই। নতুন বছরের প্রথম দিন সারা দেশে শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা মেতে ওঠে নতুন বইয়ের উৎসবে। নানা দেশে নানা উৎসব পালিত হয়। আর বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়, যা একান্তভাবেই ইতিবাচক। বাংলাদেশে অনেক উৎসব পালিত হয়, যেগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য, উৎপত্তি-ইতিহাস ও তার সঙ্গে সর্বসাধারণের সংযুক্তির প্রকার ও মাত্রা অনুসারে; যেমন সামাজিক উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় উৎসব, প্রাণের উৎসব ইত্যাদি। উৎসবগুলোর কোনো কোনোটি 'মেলা' নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। উৎসব বা মেলা শব্দটির মধ্যে বিশেষ এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা জড়িয়ে আছে, প্রাণের আবেগ ও সাধারণের সংশ্লিষ্টতার বিপুলতা রয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর তার আবির্ভাব, উদযাপন বা অনুষ্ঠিত হওয়ার একটি পৌনঃপুনিকতা বা নিয়মতান্ত্রিকতা রয়েছে। যা 'অনুষ্ঠান' বা এরকম কোনো শব্দের মধ্যে পাওয়া যায় না। মূলত একটি অনুষ্ঠান যখন ওই রকম মাত্রা পায়, তখনই তা উৎসবে পরিণত হয়। উলেস্নখ্য, এখানে 'দিবস'লগ্ন কিছু নিয়মিত পালনীয় অনুষ্ঠানও রয়েছে আমাদের।

যেগুলোর মধ্যে জাতীয় আনন্দ-বেদনা-গর্ব জড়িত রয়েছে। কেবল বেদনা জড়িত রয়েছে, এমন দিবস পালনও রয়েছে, যেমন জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস পালন আমাদের জাতীয়ভাবে পালনীয় অনুষ্ঠান। কয়েকটি উৎসব রয়েছে, যেগুলো বাঙালির প্রাণের উৎসব নামে কথিত হয় এখন। যেমন- পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন বা বাংলা নববর্ষ পালন, একুশের বইমেলা। এগুলো বাঙালির অনন্য উৎসব। আর একটি অনন্য উৎসব হলো 'বই উৎসব'। যেটি প্রাণের উৎসব- বিশেষত শিশুদের, স্কুল পড়ুয়াদের, জাতির সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠীর এক বিশেষ মূল্যবান অংশের- বাংলাদেশের আগামীদিনের কর্ণধারদের, ভবিষ্যতের। বাংলাদেশের জ্ঞানবিকাশের গতিপ্রকৃতি ও প্রচেষ্টার একটি উজ্জ্বল প্রতিফলক এটি, যার গুণগত ও প্রভাবসৃষ্টিকারী ব্যাপক ভূমিকা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এখন- এমন মনে করতে হবেই। নতুবা এমন উৎসব থেকে কার্যকর ফল আহরণ ত্বরান্বিত, প্রোজ্জ্বল ও প্রভূত হবে না। জাতীর ভবিষ্যতের একটি বিশেষ প্রাণবন্ত অংশের কী ব্যাপক উদ্দীপনা এর সঙ্গে ইতোমধ্যে জড়িত হয়ে গেছে। এটি আমাদের বুঝতে হবে। এটিকে শিশুদের শুধু নয়- আমাদের সবার প্রাণের উৎসবে পরিণত করতে হবে।আর করোনা অতিমারীর কারণে এই দুই বছর ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই প্রথম দিনে শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণের কাজটি শুরু করতে পারায় শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। সেই বই যদি পাওয়া যায় বিনামূল্যে, তাহলে তো কথাই নেই।

এর মধ্যে এক ধরনের সার্বজনীনতাও রয়েছে। কেননা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অনেকেরই নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তারা আগে পুরনো বই দিয়েই বছর পার করতো। এখন সবার হাতে থাকে নতুন বই। টানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়- শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম ভালো কাজ নিঃসন্দেহে।

কোনো কোনো বছর বই প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বটে, তবে উদ্যোগটি যে মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিতরণকৃত কিছু বইয়ের মুদ্রণ বিভ্রাট, পাতা এলোমেলো থাকা, ছাপার মান খারাপ হওয়া ইত্যাদি অভিযোগ এসেছে অতীতে। এত বিশাল কর্মযজ্ঞে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে, আসতে পারে বিভিন্ন স্তরে বাধা। কখনো কখনো সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতা ও দুর্নীতির পরিচয় দিয়ে থাকেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যর্থতা অথবা দুর্নীতির কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। এ কার্যক্রমের ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে কীভাবে একে সর্বাঙ্গীণ সফল করা যায়, সেদিকেই সরকারের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই, এমন একটি কার্যক্রম যেন সবসময় সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়।

বিনামূল্যের বই বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য এক বড় ধরনের স্বস্তি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হয়। আমাদের বিশ্বাস, শুধু বিনামূল্যের বই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছু করার আছে। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়াসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্য সমস্যাগুলোরও যদি প্রতিকার করা যায়, তাহলে এ দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিতটি শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারবে, যা একটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পরিশেষে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এ গতি অপ্রতিরোধ্য। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শত বাধা পেরিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ—এ আমাদের বিশ্বাস।তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিনামূল্যের বই এখনো বাজারে পাওয়া যায়। ফলে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, দেশে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও বিতরণকে ঘিরে যে কায়েমি চক্র গড়ে উঠেছিল তারা এখনো সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় মনোভাবই প্রত্যাশিত। পাশাপাশি মনে রাখা দরকার, বই উৎসবকে তাৎপর্যবহ করতে হলে শিক্ষার মানের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা মনে করি, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যাতে পাঠের ভেতর দিয়ে তারা আনন্দ খুঁজে পায়। পাঠ্যপুস্তক উৎসব তখনই অর্থবহ হবে যখন মানসম্মত শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে দেশের প্রতিটি ঘরে। শিক্ষা হতে হবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। শিক্ষার মান নিশ্চিত সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সে চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবেলা করতে হবে। আবার যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে মান নিশ্চিতই একমাত্র শর্ত নয়। জানা-শোনার জগৎকে আরো প্রসারিত করা চাই। এ জন্য সাধারণ জ্ঞানের ওপর শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে পারিবারিক শিক্ষার ওপরও, যাতে একজন শিক্ষার্থী নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হিসেবে গড়ে ওঠে-এ হলো কামনা।

লেখক : চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক।