কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : বোয়ালমারী উপজেলার ১০০শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে দালালের উৎপাত বেড়েই চলেছে। এ সব দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। আর এসব কারণেই এখানকার মানুষ বলে থাকেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারা দালালের কাছে জিম্মি!

উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসা একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা নামসর্বস্ব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

সরকারি হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ভিজিটিং কার্ড ও ডাক্তারদের হ্যান্ডবিল বিতরণ করছে। মূল ফটক থেকে শুরু করে হাসপাতাল ওয়ার্ড ও ইমার্জেন্সি পর্যন্ত পুরো হাসপাতাল জুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য রয়েছে বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।

ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের পোষা দালালদের প্ররোচনায় নিঃস্ব হচ্ছে রোগী ও স্বজনরা। অপরদিকে রোগীদের প্রতিনিয়িত পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।

জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের সামনে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা সেন্টার ও তার মালিকদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে বর্তমান সরকার আরো একটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করে ১০০ শয্যায় উন্নীত করেছে। বর্তমানে জরুরী বিভাগ ছাড়াও গাইনী-প্রসূতি, শিশু মেডিসিন,সার্জারী,ডায়রিয়া ও প্যাথলজি বিভাগসহ অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে হাসপাতালটিতে। অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা হাসপাতালটিতে অস্ত্রপোচারের সুনাম রয়েছে। এতো কিছু থাকা পরও দালাল, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের উৎপাতে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। হাসপাতালকে ঘিরে ১ ডজনেরও বেশি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।

এসব দালাল চক্রের পাশাপাশি ফার্মেসীর মালিকরাও একাজে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিশন ভিত্তিক কাজ করা এ সব দালাল চক্রের হোতারা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে অসচেতন-নিরীহ রোগীদের বাগিয়ে নিয়ে যায় প্রাইভেট ক্লিনিকে। সেখানে ভর্তি ফি হতে শুরু করে রোগ নির্নয়ের জন্য পরীক্ষা নীরিক্ষা ফি থেকে কমিশন পান দালালরা।

উপজেলার দাদপুর ইউনিয়ন থেকে সেবা নিতে আসা প্রবাসী কালাম, পৌর এলাকার নাজনীন ও গুনবহা থেকে সেবা নিতে আসা হাসান বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে হাসপাতালের ভিতরে দাড়িয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালরা ভিজিটিং কার্ড ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করে প্রচার করছে ভালো চিকিৎসা পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। এতে আপনি ভালো চিকিৎসা পাবেন উন্নত পরিবেশে এবং কম খরচে। সরকারি হাসপাতালে ভালো কোন ডাক্তার নেই। যেখানে ভালো ডাক্তার নেই, সেখানে ভালো চিকিৎসা হবে কীভাবে? এভাবেই রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করছে দালাল চক্র।

রূপাপাত ইউনিয়নের কদমী গ্রাম থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী হাসিব ও তার স্ত্রী জানান, শুনেছি সরকারি হাসপাতাল ভালো ও অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে, তাই চিকিৎসা নিতে আসছি। কিন্তু হাসপাতালের সামনে আসলে একজন মহিলা তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার জন্য বলেন; তার কথা না শুনে ডাক্তার দেখিয়ে বের হলে ওই মহিলা আবার ধরেছে তাদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিক্ষা- নীরিক্ষা করার জন্য। তার কথায় আমরা রাজি না হলে ওই মহিলা বলে ভালো কথা 'কইছি ভালো লাগেনা, সরকারি হাসপাতালে সেবার নামে কি হয় আমরা মনে হয় জানিনা। তার ওইখানে পরিক্ষা না করাতে চাইলে তিনি বাজে মন্তব্যসহ অশ্লীল শব্দচয়ণ করেন। এ ভাবেই সরকারি হাসপাতালের রোগীদের সেবাবঞ্চিত করে ওই সব দালালরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাহিদ আল রাকিব বলেন, আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। আমি এখানকার পরিবেশ সম্পরৃকে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নই। আমাকে বিষয়টা পর্যবেক্ষণের জন্যে কিছুটা সময় দিতে হবে। আমার স্টাফ এবং পর্যায়ক্রমে ক্লিনিক মালিকদের সাথে আলাপ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দালাল মুক্ত রাখার চেষ্টা করবো। আমার মেডিকেল অফিসার গণ যাতে ক্লিনিকের দালালদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট না দেন, সে ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এজন্যে তিনি এলাকার মিডিয়া কর্মীদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, যে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আমার আছে তা মিডিয়ায় না এনে আমাকে বলুন, শতভাগ আন্তরিকতার সাথে স্বল্প সময়ে সমাধানের চেষ্টা করবো। তিনি তাঁর পূর্বসূরি ডা. খালেদুর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি অনিয়মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অনেক কিছুই নিয়মের মধ্যে এনেছেন, আমি সেগুলির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবো।

(কেএফ/এসপি/জানুয়ারি ২৫, ২০২৩)