স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবেনা। আমাদের সংবিধানেরও ম্যাসেজটা এমন যে, রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে যেখানে অন্পুার্জিত অর্থ কেউ যেন ভোগ করতে না পারে। সে লক্ষ্যেই দুদক সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদক আয়োজিত গণশুনানীতে প্রধান অথিতি হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে গণশুনানী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো.শামসুর রহমান, দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোরশেদ আলম, গাজীপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এমএ বারী। গণশুনানীতে সরকারী-বেসকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকে সেবা গ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।

গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুর শহরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে এলাকাবাসী থেকে প্রাপ্ত লিখিত অভিযোগের উপর প্রধান অতিথির সামনে অভিযোগকারীর অভিযোগ উপস্থাপন করা হয় এবং যেগুলো সম্ভব সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়।

প্রধান অতিথি বলেন, গুরুতর অভিযাগগুলো আমলে নিয়ে দুদকের আইন ও নিয়মানুয়ায়ি পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির কোথাও কোন সুযোগ নেই। যে যেই ধর্মেরই হোন না কেন, কেউ কিন্তু দুর্নীতিকে সাপোর্ট করে না। কোন অভিযোগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ যতদিন সেবাটি না পাবে ততদিন দুদক আপনাদের সঙ্গেই আছে, থাকবে। দুদক ভালোর সঙ্গে থাকবে, খারাপের সঙ্গে থাকবে না।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাল নিয়ে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা কাঙ্খিত সেবা পান না। চিকিৎসকরাব্যবস্থা পত্রে যেই ঔষধ লেখেন তার সবগুলো হাসপাতালে পাওয়া যায়না, বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালটিতে দালালচক্রে ভরা।

সদর ভুমি অফিস নিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় রফিকুল ইসলাম। ওই অফিসে নামজারি করতে হলে ১২হাজার টাকা দবি করেন। পাসপোর্ট নিয়ে নানা হয়রানীর ও বিরম্বনার অভিযোগ করেন গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার আলেক মিয়া। সবার জন্য ওপেন ফ্লোর নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরে নের লিফ্ট, রাস্তাসহ কয়েকশত কোটি টাকার অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ এবং দুদকের অনুসন্ধানে ধীরগতি বিষয়ে দৈনিক জনতার গাজীপুর প্রতিনিধি রাহিম সরকারের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন সব অভিযোগেরই অনুসন্ধান চলছে, আমারা এখানে এসেছি এবং এইসব আয়োজন দেখে কি মনে হয় না সব কিছুই তদন্ত হবে।

এভাবে সকাল ১০টা থেকে টানা বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিআরটিএ, পল্লীবিদ্যুৎ, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগের উপর গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অভিযোগের বিষয়ে জবাব ও সমাধানের আশ্বাস দেন।

সচিব বলেন, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতি আইন মোতাবেক আমারা দুই ধরণের কাজ করে থাকি। একটি হলো প্রতিকারমূলক এবং অপরটি হলো প্রতিরোধমূলক। আজকে আমরা গাজীপুরে এসেছি প্রতিরোধমূলক কাজে। আজকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় একশত অভিযোগ আমাদের হাতে পৌঁছেছে। এগুলো যতদিন নিষ্পতি না হবে ততদিন পর্যন্ত দুদক বসে থাকবে না এবং এগুলোর আইনগত পদক্ষেপ পরবর্তীতে নেয়া হবে। আমাদের গণশুনানীর উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবাটা নিশ্চিত করা। এ নিয়ে কেউ যদি এখনও গাফিলতি করেন বা ভবিষতে করেন তা থেকে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। দুদকের ১১টা কার্যক্রমের মধ্যে ৬টিই প্রতিরোধমূলক।

এরআগে বিভিন্ন জেলায় দুদকের ১৪৮টি গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর নিয়ে দুদকের ১৫৯টি গণশুনী অনুষ্ঠিত হলো। এ গণশুনানীর উদ্দেশ্য হলো সবার মাঝে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক মনোভাব তৈরি করা। এ পর্যন্ত যতগুলো অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঘুম হারাম বলেন দুদক সচিব।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০১৩)